আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আগামী বছরের শুরুতে, ৫ জানুয়ারি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের প্রায় ৩ হাজার দলিত সম্প্র’দায়ের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন।
উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা নিপী’ড়িত হয়ে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম হওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে ‘তামিল পুলিগালা কাটচি’ নামে একটি সংগঠন। খবর দ্য নিউজ মিনিটের।
সালেম জেলার বাসিন্দা রনজিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দলিত সম্প্র’দায়ের ৩ হাজার সদস্য ধাপে ধাপে ইসলাম গ্রহণ করবেন। ৫ জানুয়ারি প্রথমদিন ২০০ জন ধর্ম পরিবর্তন করবেন। পরদিন আরো ২০০ জন, এভাবে এ প্রক্রিয়া অ’ব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রায় ৩ হাজার সদস্য মুসলমান হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
মুসলমান হবার ইচ্ছা পোষণ করে সুরেশ কুমার বলেন, প্রথম দিনেই পরিবারসহ মুসলমান হতে চাই। ‘দলিত’ চিহ্নটা যত দ্রুত সম্ভব দূর করতে চাই। একবার দূর হলেই সবধরনের বৈ’ষম্য কমে যাবে।
বিশেষভাবে কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ৩ হাজার দলিত মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বিস্তারিত বর্ণনাও এসেছে দ্য নিউজ মিনিটে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার মেট্টুপাল্যাম এলাকায় দলিত সম্প্র’দায়ের কেউ যাতে তার জমিতে না যেতে পারে, সেজন্য একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে সেই প্রাচীরটি ধ্ব’সে পড়লে দলিত সম্প্রদায়ের ১১ নারী ও ৩ শিশুসহ ১৭ জন নিহ’ত হন।
এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেন নিহ’তদের পরিবারের সদস্যরা। ভারতীয় দ’ণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারায় আনা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও প্র’ভাব খাটিয়ে জামিনে মুক্তি পান সেই ব্যক্তি। এতে ক্ষু’ব্ধ হয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মিছিল করেন দলিত সম্প্র’দায়ের বাসিন্দাদের নিয়ে সংগঠন তামিল পুলিগাল।
কিন্তু সাম্প্র’দায়িক উ’স্কানির অভিযোগ দেখিয়ে সেই মিছিল থেকে সংগঠনটির সভাপতি নাগাই তিরুভল্লুয়ানকে গ্রেপ্তার করে কারাগা’রে প্রেরণ করে পুলিশ।
এ ঘটনা চরম ক্ষো’ভ প্রকাশ করে দলিত সম্প্র’দায়ের বাসিন্দারা। যে ধর্মে দীক্ষিত হলে তারা অ’ত্যাচারিত হবেন না সে ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রাচীর ধ্ব’সে ১৭ জনের মৃ’ত্যুর বিচার চেয়েও তা না পেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে তামিলনাড়ুর দলিত সম্প্র’দায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা তালিম পুলিগাল কাচির (টিপিকে) সাধারণ সম্পাদক এম ইলাভেনিল দ্য নিউজ মিনিটকে বলেন, আমরা ভারতে বহু বছর ধরে বৈ’ষম্যের শি’কার। যে ধর্ম আমাদের সুরক্ষা দিতে পারছে না তাতে থাকার কোনো কারন দেখছি না। এতোগুলো প্রাণ গেল আমাদের। তবুও বিচার পেলাম না। নিজেদের শুধু শুধু বি’সর্জন দিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এবার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামে দীক্ষিত হব।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিল প্রশাসন। কিন্তু আমাদের সংগঠনের সভাপতি গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায়বিচার চাইতে গেলে তাকে কারাগা’রে পাঠানো হয়। এটা কেমন বিচার? অতীতেও বিভিন্ন সময় তারা কোনো অভিযোগ করে সুষ্ঠু বিচার পাননি বলে জানান।
বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার দলিত সম্প্র’দায়ের ওপর নিপী’ড়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদেরকে কুপ থেকে পানি খেতে দেয় না অন্যরা। এমনকি স্থানীয় মন্দিরে পুজা করতেও ঢুকতে বাধা দেয়া হয়।
উদহারণ দিতে গিয়ে টিপিকের সদস্য রনজিত নামে দলিত সম্প্র’দায়ের ওই বাসিন্দা বলেন, কারণে অ’কারণে রাস্তায় আমাদের মা’রধর করা হয়। এমনকি উচ্চবর্ণদের সামনে রাস্তায় মোবাইল ফোনে কথা বললেও নিপী’ড়নের শি’কার হতে হয় আমাদের!