সময় এখন ডেস্ক:
সেই শতবর্ষী আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী মাস্টারকে গণভবনে ডেকে নিয়ে শ্রদ্ধা ও সন্মান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের মাধ্যমে তাকে ডেকে নেন দলীয় সভানেত্রী। এসময় ১৯৫০ সালে যশোরে জাতির পিতার জনসভা এবং মানপত্র পাঠের গৌরবময় স্মৃতিচারণের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
এ সময় গণভবনে ইসহাক আলী মাস্টারের সঙ্গে ছিলেন তার পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতি।
গত ২০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে লাঠিতে ভর দিয়ে যোগদান করেন কুষ্টিয়ার ১০৪ বছর বয়সী ইসহাক আলী মাস্টার। সে সময় এ নিয়ে আ’লীগ অন্তপ্রাণ শতবর্ষী ইসহাক মাস্টার, দলের জন্য অসামান্য নিবেদন– শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সময় এখন ডটনেটে। যা সাড়া ফেলে দেশজুড়ে।
আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, শতবর্ষী আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী মাস্টারকে গণভবনে ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। ১৯৫০ সালে জাতির পিতা যশোর সফর করেছিলেন। সেই সময় মঞ্চে কে কে উপস্থিত ছিলেন এবং সেই দিন ভাষণে কী বলেছিলেন সেসব স্মৃতিচারণ প্রধানমন্ত্রী তার কাছ থেকে শোনেন।
এক পর্যায়ে শতবর্ষী ইসহাক আলী মাস্টার আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করেন। এছাড়া গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান শতবর্ষী এই আওয়ামী লীগ নেতা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মতো বঙ্গবন্ধুপ্রেমী আছে বলেই আওয়ামী লীগের ভিত এতো শক্ত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযু’দ্ধে কুষ্টিয়ায় যে ক’জন সংগঠক ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইসহাক আলী মাস্টার। অথচ কোনদিন তিনি মুক্তিযো’দ্ধার স্বীকৃতি চাননি।
ছিলেন আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও টানা ৪০ বছর সভাপতি এবং আব্দালপুর ইউনিয়নের রেকর্ড ৫ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। টানা ৪০টি বছর নিরলসভাবে খেটেছেন নিজ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে।
‘৭১ সালের পূর্বে বঙ্গবন্ধু যখন কুষ্টিয়া আসেন তখন হরিনারায়ণপুর বাজারে অনুষ্ঠিত জনসভায় মানপত্র পাঠ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কুষ্টিয়া সফরে আসলে ইসহাক মাস্টারের নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
স্বৈ’রশাসক এইচ এম এরশাদ যখন দেশজুড়ে চালাচ্ছিল স্বৈ’রশাসন তখনকার স্বৈ’রাচারবিরো’ধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বুকে বো’মা বেঁধে জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে কুষ্টিয়া আসেন তিঁনি।
এছাড়াও হ্যাঁ-না ভোটের সময় নিজ ইউনিয়ন কেন্দ্রে না ভোটকে জিতিয়ে দেয়ায় তাঁর অবদান ছিল অন-স্বীকার্য। যার ফলস্বরুপ সেনাবাহিনী তাঁকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে বেশ কিছুদিন আটকে রেখে অ-মানুষিক নির্যা’তন চালায় এবং পরবর্তীতে মৃ’তপ্রায় অবস্থায় মুক্তি দেয় যার ক্ষ’তচিহ্ন তিনি আজো বয়ে বেড়াচ্ছেন।
বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের একজন সম্মানিত উপদেষ্টা তিনি। দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি সমাজসেবায়ও রয়েছে তাঁর অপরিসীম অবদান।
আব্দালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার সুবাদে নিজ ইউনিয়নে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার ব্রত নিয়ে গড়ে তুলেছেন আব্দালপুর হাইস্কুল এবং খাতের আলী ডিগ্রী কলেজ। নিজ ইউনিয়ন আব্দালপুর তো বটেই, পুরো কুষ্টিয়া জেলাতেই বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা এই মহান ব্যক্তি। এ ছাড়াও নিজ গ্রাম ও ইউনিয়নে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণে তাঁর রয়েছে অপরিসীম অবদান।
তাঁর ছোট পুত্র আরেক মুজিব আদর্শে উজ্জীবিত সৈনিক আলী মর্তুজা সিদ্দিকী খসরু, যিনি কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার নেতৃত্বেই শিবিরমুক্ত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল।
তিনি কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সুযোগ্য সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত।
মুক্তিযু’দ্ধের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইসহাক আলী মাস্টার তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ছুটে চলেছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।
জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত প্রিয় সংগঠনের জন্য খেটে যেতে চান এই পরোপকারী, নির’হংকারী, স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতো’ভয় বঙ্গবন্ধু সৈনিক ইসহাক আলী মাস্টার।
2.9K