সময় এখন ডেস্ক:
সরকার ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় পরিবর্তন চাচ্ছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এটা (সমাপনী পরীক্ষা) একটু সহজ করা যায় কীভাবে, যাতে (শিশুদের) টানাহেঁচড়া না থাকে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তবে সরকার কী ধরনের পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
গত একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক সমাপনী তুলে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেননি। আমরাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। আমাদের কাছে অভিভাবকরা বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলেন, তারা আমাদের পরীক্ষাটি তুলে দেয়ার জন্য বলছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা হলো এখানে কোমলমতি শিশুদের একদিকে মেধার বিকাশ, মননশীলতা, ধৈর্য, একটা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের যে একটা প্রতিযোগিতা- এটা আমরা সৃষ্টি করতে চাচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। আমরা যখন পড়েছি, তখনও কিছু পরীক্ষা ছিল প্রাইমারিতে। যারা বৃত্তি পরীক্ষা দিত স্যাররা তাদের আলাদাভাবে ড্রাইভ দিতো, তারা যাতে ভালো করে।
আমরা সকলের বেলায় সমান করছি, একটি পরীক্ষা থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। কারণটা হলো তাদের একটা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবও গড়ে তোলা সম্ভব এই পরীক্ষাটার মাধ্যমে।
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এটা করে কী, মায়েরা এত বেশি টানাটানি করে জিপিএ-টিপিয়ে নিয়ে। আমরা চিন্তা করছি পরীক্ষাটা নিয়ে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও কথা হলো এটার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি-না। পরীক্ষা রাখা হবে। এই পরীক্ষাটা উনি (প্রধানমন্ত্রী) রাখতে চাচ্ছেন। এটা একটু সহজ করা যায় কীভাবে, যাতে (শিশুদের) টানাহেঁ’চড়া না থাকে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সাল থেকে পরীক্ষাটা চালু করেন, এই পরীক্ষাটা আজও আছে। আমরা কিছুটা হয়তো পরিবর্তন করতে চাচ্ছি।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমার কারণ
এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেন, পাসের হার ক্রমান্বয়ে বাড়বে না। তাহলে তো ১০০ ক্রস করে যাবে। কখনও কমবে কখনও বাড়বে। প্রশ্ন হয়তো এবার সেভাবেই হয়েছে যার ফলে পাস কমে এসেছে। এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) তুলে দেয়া হয়েছে, এর একটা প্রভাব থাকতে পারে। তবে পাসের হার ৯৫ এর নিচে নামেনি।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব বছর তো পাসের হার এক রকম থাকবে না। এবার আমরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা নিয়েছি, পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি করতে দেইনি, ইত্যাদি কারণে হয়তো পরীক্ষা সঠিকভাবে হয়েছে। কিছুটা সুন্দর মূল্যায়ন হয়েছে হয়তোবা, এটাই হয়তো (ফল খারাপ হওয়ার) কারণ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, আগে যে উপজেলার খাতা সেই উপজেলায় দেখা হতো। এবার আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে হয়তো কিছুটা কমতে পারে।
পর্যায়ক্রমে এমসিকিউ তুলে দেয়া হচ্ছিল, এবার শতভাগ সৃজনশীল করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের সময় বাড়ানো হয়নি, ফলাফলে সেটার প্রভাব পড়েছে কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি না। আমাদের কোনো কর্মকর্তা এটা বলেনি যে বাচ্চারা সময় পাচ্ছে না।
কোনো উপজেলায় পাসের হার ৬০ শতাংশের মতো। একসঙ্গে ৪০ জন ঝরে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, তারা কেন এত খারাপ করল- এ বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব, যাতে তারা আরও ভাল করতে পারে। আমরা তাদের মোটিভেট করব।
এ বিষয়ে সচিব বলেন, শা’স্তি আরোপের মাধ্যমে কিছু হবে না। আমরা এখন সারাদেশে ৬৬ হাজার স্কুলে শা’স্তি আরোপের মাধ্যমে কিছু অ্যাচিভ (অর্জন) করতে চাই না। আমরা চাচ্ছি মোটিভেশন করতে।
আমরা হেড মাস্টারদের মোটিভেট করছি, সহকারী শিক্ষকদের মোটিভেট করছি, আমাদের মায়েদের মোটিভেট করছি, আমরা আমাদের প্রশাসনকে মোটিভেট করছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটা অ্যাচিভ করা সম্ভব, কিন্তু শা’স্তি আরোপের মাধ্যমে না।