‘কালী’ নামে ডাকলেই পুকুর থেকে উঠে আসে কচ্ছপটি

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

প্রায় ৪০ বছর আগে জমিতে চাষ করতে গিয়ে আলের ধারে ছোট্ট একটা কচ্ছপের ছানা পান পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদের মহিষপুকুরের বাসিন্দা দিলীপ দাস। দিয়াশলাই বাক্সে ভরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে এখনও দিলীপের পরিবারেই রয়েছে কচ্ছপটি।

বাড়ির পাশের পুকুরে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠেছে। পরিবারের লোকজন তাকে ডাকেন ‘কালী’ বলে। কালী এখন দাস বাড়ির সদস্য। কালীর জন্য এলাকাটি পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘কাটা কচ্ছপ পুকুরপাড়’ নামে।

পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, বাড়ির ছেলের মতোই যত্ন করা হয় কালীকে। দুপুরবেলা পুকুরপাড়ে কালীকে ভাত দেয়া হয়। পুকুর পাড়ে গিয়ে নাম ধরে ডাকলেই ঘাটের কাছে এসে ভাত খেয়ে যায় কালী। এক সময় প্রায়ই কালীকে পানি থেকে তুলে আনা হতো। এখন অবশ্য কলেবরে বেশ নাদুসনুদুস সে। ওজন প্রায় ৩০ কেজি ছুঁই ছুঁই।

পরিবারের এক সদস্য বলেন, বাচ্চা বড় হয়ে গেলে যেমন আর কোলে নেয়া যায় না, আমাদের কালীও এখন সে রকম বড়। পানি থেকে তুলতে ক’ষ্ট হয়।

ভাত ছাড়াও কলাপাতা, সজনে পাতা পুকুরে দেয়া হয় কালীর জন্য। অ’সুস্থ হলে চিকিৎসক, ও’ষুধের ব্যবস্থা হয়।

দিলীপ দাসের বাড়ির সদস্য ঝর্না দাস বলেন, সম্প্রতি ওর গালে ঘা হয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শে ও’ষুধ খাওয়ানো হয়েছে। এখন কিছুদিন শক্ত খাবার দেয়া হচ্ছে না।

পুকুরটি ঘিরে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবুও কালী এই পুকুর ছেড়ে অন্যত্র যায় না। পাড়া পড়শিরাও তাকে ভালবেসে ফেলেছেন। দাস পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাতের অন্ধকারে একবার কালীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল কেউ। বেশ কিছুদিন পুকুরে ছিল না। পরে অবশ্য আবার তাকে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়।

কালীকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ভিড় করেন।

ওই বাড়ির ছেলে নিপুল দাস বলেন, হাসনাবাদ, খুলনা, বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসেন আমাদের কালীকে দেখতে। কয়েকবছর আগে বন দপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি কচ্ছপটি নিয়ে যেতে এসেছিল। তবে তাদের ভুয়া পরিচয় ফাঁ’স হয়ে যায়!

বাড়ির কর্তা মধু দাস বলেন, কচ্ছপটির প্রতি আমাদের মায়া পড়েছে। ওকে খুব ছোট্ট অবস্থায় পেয়েছিলাম। সে দিন থেকেই আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে। আমরা শুনেছি কচ্ছপ অনেক দিন বাঁচে। একদিন আমরা থাকব না। কিন্তু আমার ছেলে-নাতি-নাতনিরা ওর দেখভাল করবে।

কিন্তু বন্যপ্রাণী আইন দেখিয়ে কেউ যদি কচ্ছপটি নিয়ে যেতে চান?

পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে বললেন, এখান থেকে ওকে কিছুতেই নিয়ে যেতে দেব না। আমরা তো ওকে ক’ষ্ট দিচ্ছি না। লালন-পালনই করছি।

স্থানীয় পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পারুল গাজি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে কী আছে জানি না, তবে ওরা সন্তান-স্নেহে কচ্ছপটিকে বড় করে তুলছেন।

আনন্দবাজার

শেয়ার করুন !
  • 857
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!