সময় এখন ডেস্ক:
সরকারের বিভিন্ন কৌশলে ভুল আছে বলে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ভুল-ভ্রা’ন্তি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাফল্য চোখে পড়ার মত।
শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ভুল আছে। আমরা অভ্রা’ন্ত, এই দাবি আমি করব না। চলার পথে কৌশলের ভুল আছে, আমাদের কর্মেও ভুল আছে। আমরা অভ্রা’ন্ত নই। অভ্রা’ন্ত দাবি করা সঠিক নয়। ভুল-ত্রু’টি মিলিয়ে আমরা বাংলাদেশেকে আজকে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা কোথায় নিয়ে গেছেন। আজকে আইএমএফ সর্বশেষ বলছে, আজকে বাংলাদেশ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে নাম্বার ওয়ান।
রাজনীতিবিদদের দৈ’ন্যতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে সামাজিক অনুষ্ঠানেও কে, কী মনে করে, কারো মৃ’ত্যুর পর জানাজায় যাব কি না; এই দ্বিধাও আমাদের মাথায় কাজ করে। এসব বিষয় রাজনীতির জন্য শুভ নয়। এই কনফ্রেনটেশনাল পলিটিক্স গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্র ১ চাকার বাইসাইকেল নয়, গণতন্ত্র ২ চাকার বাইসাইকেল।
এটা আমাদের মনে রাখতে হবে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরো’ধী দলও গণতন্ত্রের বিকাশে অ-পরিহার্য শক্তি। বিরো’ধীদলকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিরো’ধী দলকেও শক্তিশালী করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিতে আজ সৌজন্যবোধ বিরল। খালেদা জিয়ার সন্তানের মৃ’ত্যুর পর শেখ হাসিনা তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন সন্তানহা’রা মাকে সান্ত্বনা দিতে। ঘরের দরজা, বাইরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার মুখের ওপর এই অল’ঙ্ঘনীয় দেয়াল আরও উঁচুতে উঠল। সেদিন যদি শেখ হাসিনা শোকাতুর মাকে সান্ত্বনা দিতে সেই গৃহে প্রবেশ করতে পারতেন, রাজনীতিতে কর্ম সম্পর্কের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে পারত।
তিনি বলেন, রাজনীতিকরা এখন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং মৃ’ত্যুর সংবাদ শুনেও সেখানে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। এটি রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষ’তিকর। এ অবস্থা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন কিছু আসন সং’কটে পড়েছিল, সে সময় আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জাতীয় পার্টি-জেপি। মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সরকার গঠনে সহায়তা করেছিল।
কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে সাম্প্রদা’য়িক অপ’শক্তিকে প্র’তিহত করতে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছিল। আজ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এ ধারা অ’ব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টি-জেপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলতে চাই, আসুন আমরা একসঙ্গে সাম্প্রদা’য়িক অপ’শক্তির বিরু’দ্ধে কাজ করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করি।
বঙ্গবন্ধুর খু’নিদের পুরস্কৃত করার নিন্দা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেদিন কারা বঙ্গবন্ধুর খু’নিদের পুরস্কৃত করেছিল? নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল? বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল? কারা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হ’ত্যার পর বিচারের পথ রু’দ্ধ করেছিল? কারা পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে সংযুক্ত করে আইনে পরিণত করেছিল যাতে বঙ্গবন্ধুর হ’ত্যার খু’নিদের বিচার না হয়। ইতিহাস তাদের ভুলে যাবে না।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্পর্কের এই অল’ঙ্ঘনীয় দেয়াল সেখান থেকেই উঁচু হয়েছে। সেই দেয়াল উঁচু হতে হতে আরো উঁচু হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হাম’লার প্রাইম টার্গেট শেখ হাসিনা। সেই ইতিহাস বেশিদিন আগের নয়। কারা তখন ক্ষমতায়, কারা প্ল্যানার, কারা মাস্টারমাইন্ড সবাই জানে। ইতিহাসের এই নি’র্মম অ-সত্য অ’স্বীকার করা উপায় নেই।
বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে বিত’র্কিত করবেন না। নির্বাচনের মাঝপথে পালিয়ে যাবেন না। ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন।
জেপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। মেয়রদের সততার সঙ্গে কাজ করারও পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
2.6K