ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির রাজাপুরে রাস্তা সংস্কারে এবার বালির বদলে বেলে মাটি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানির সঙ্গে এ বেলে মাটি মিশে রাস্তাটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকায় যান চলাচলে ভোগা’ন্তি চরমে পৌঁছেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ রাস্তার সংস্কার কাজের মান ও মানুষের ভোগা’ন্তি নিয়ে প্র’তিবাদ করছেন অনেকে। ভাইরাল হয়েছে ওই রাস্তার ছবি ও ভোগা’ন্তির চিত্র।
জানা যায়, উপজেলার মেডিকেল মোড় থেকে সাতুরিয়া স্কুল সংলগ্ন স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও সড়ক উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে বালি ফেলে রাখা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তাটি যেন কাদা-পানির খালে পরিণত হয়েছে। এতদিন রাস্তায় বালি ফেলে রাখলেও শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এলাকার মানুষ বুঝতে পারেননি বালির বদলে বেলে মাটি ব্যবহার করেছেন ঠিকাদার। হঠাৎ বৃষ্টিতে ঠিকাদারের দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। এ নিয়ে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষো’ভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই রাস্তাটি সংস্কারের নামে খুঁড়ে রাখা হয়। পরে খুঁড়ে রাখা রাস্তায় বেলে মাটি ও লোকাল বালি দেয়ায় বৃষ্টিতে রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। এতে জনসাধারণ এবং সড়কে গাড়িচালক ও যাত্রীদের সীমাহীন ভোগা’ন্তিতে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয়দের ধারণা, পরি’ত্যক্ত বেলে মাটি দেয়ায় রাস্তার অবস্থা এমন হয়েছে।
উপজেলা কাঠিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিক্রম দাস বলেন, প্রথমে মনে করেছিলাম লোকাল বালি, এখন দেখা গেল হুলার হাটের বেলে মাটি দেয়া হয়েছে রাস্তায়। জীবনে অনেক রাস্তার কাজ করতে দেখেছি তবে এমন দুর্নীতির খেলা চোখে পড়েনি। রাজাপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথেই দেখলাম কাদা-পানির ঢেউ উঠেছে রাস্তায়। আসলে এটা ঠিকাদরের দোষ নয়, এগুলো দেখভালের জন্য একটা দপ্তর আছে। তারা মাল খেয়ে এদিকে আসে না, আর দেখেও না। ভাবতেছি এ বেলে মাটির ওপরে কার্পেটিং হলে অবস্থাটা কী হবে? ভগবানের ইশারায় পাপের লেজ বের হয়ে গেল। এনারা যে খেলা খেলেছিল তার ওপরে বড় খেলা খেলে ভগবান বৃষ্টি দিয়া সাধারণ মানুষকে আসল রূপটা দেখাই দিছে।
বিক্রম আরও বলেন, রাস্তাটার এ দৈন্য’দশা আজ নতুন নয়। বছরে ২/৩ নবার রাস্তাটি মেরামত হয়। কর্তৃপক্ষ মাল কামাবার একটা গুটি হিসাবে ব্যবহার করছে রাস্তটি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে যথেষ্ট তৎপর। কিন্তু দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ তার সঙ্গে প্র’তারণা করছে আর দুর্নাম হচ্ছে সরকারের।
স্থানীয় নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, আমাদের উপজেলায় ঠিকাদারির কাজ যে কত নিম্নমানের তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। মা-হারা সন্তানের যেমন অবস্থা, আমাদের রাজাপুর উপজেলার জনগণও একই অবস্থায় আছে। রাস্তার অবস্থা এমন যে, বাসযাত্রীরা নাগরদোলায় ওঠার আনন্দ পায়।
ঝালকাঠি কুতুবনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নান জানান, সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও যাদের কারণে রাস্তা বা ভবন মেয়াদো’ত্তীর্ণের আগেই ব্যবহার অনু’পযোগী হয়ে যায় তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা রাজাপুরের নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, গোপালগঞ্জের ঠিকাদারসহ আমরা কয়েকজন মিলে কাজটি করছি। সিলেট ও ঢাকা থেকে বালি এনে কিছু পাথর মিশিয়ে গ্রেডিং করেছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় একটু অসুবিধা হয়েছে। ভেকু মেশিন দিয়ে বালি অপসারণ করে নতুনভাবে মানসম্মত বালি ও পাথর দিয়ে পুনরায় গ্রেডিং কাজ চলমান রয়েছে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শেখ মো. নাবিল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজাপুর মেডিকেল মোড় থেকে সাতুরিয়া স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। কার্যাদেশে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। এটি সংস্কার কাজে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সবসময় দপ্তরের পক্ষ থেকে রাস্তার সংস্কার কাজের তদারকি হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রাস্তাটির সংস্কারের জন্য বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাত বদল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।