বিশেষ প্রতিবেদন:
আওয়ামী লীগ সরকারের ১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। টানা ৩য় বারের মত আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দীর্ঘ ১ বছর। এই বর্ষপূর্তির আগেই সরকারের অনেক ক্ষেত্রেই গতি শ্লথ হয়ে আসছিল। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে।
সাধারণ মানুষ মনে করে, গত ২ মেয়াদে আওয়ামী লীগ যেরকম স্বাচ্ছন্দ্যে দেশ পরিচালনা করেছিল, ৩য় মেয়াদে এসে সেই সাবলীলতায় কোথায় যেন ছন্দপ’তন হয়েছে। গত ১ বছরে সরকার অনেকগুলো ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। অনেকগুলো ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে। গত ১ বছরে জনগণ সরকারের বেশকিছু ব্যর্থতা চিহ্নিত করেছে। অনুসন্ধানে সেই ব্যর্থতাগুলো হলো-
লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
পেঁয়াজের মূল্য ধরে রাখতে না পারা সরকারের হয়তো সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। লাগামহীন ভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি যে যৌক্তিক নয় তা সরকারের নীতি নির্ধারকরাও স্বীকার করেছেন। কিন্তু পেঁয়াজের সিন্ডিকেট বা পেঁয়াজের মুনাফা বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পেঁয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং গুজব ছড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি এবং সরকারে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
সামাজিক অপরাধ
দিন দিন সমাজব্যবস্থা যেন অ-স্থিতিশীল এবং অ-সহনীয় হয়ে পড়ছে। ধৈর্য্য, স্থিতি, মানবতাবোধ কমে আসছে সমাজে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষ’য় এবং অপরাধ। দেশে খুব সামান্য কারণে খু’ন, সহিং’সতার মতো ঘটনা ঘটছে, ধ-র্ষণের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণে। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা হয়ে পড়ছি সন্দি’হান।
সরকার নারীর প্রতি সহিং’সতা, ধ-র্ষণের বি’পক্ষে অবস্থান নিলেও অপরাধ কমেনি। বরং সামাজিক এই অবক্ষ’য়টি চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে। ব্যক্তিগত হানাহা’নি, খু’ন, ক’লহও বেড়েছে। এই নৈ’রাজ্যকর অবস্থা মোকাবেলায় এই সরকারকে ব্যর্থ মনে করা হয়।
অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোতে অ-স্থিতিশীলতা
আওয়ামী লীগের প্রাণই হলো তৃণমূল থেকে শুরু করে তার যাবতীয় অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো। কিন্তু কালেভদ্রে সেই মূল অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্তঃক’লহ, দ্ব’ন্দ্ব, মনোমা’লিন্য দানা বাঁধতে থাকে। সব দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আলোচনা পরেও অভ্যন্তরীণ দ্ব’ন্দ্ব কখনো কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের বড় শক্তি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অ’ব্যহতি দেয়া হলেও এখনো বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মা’রামারি-সংঘ’র্ষ, শিক্ষকের উপর হাত তোলাসহ নানা অভিযোগ প্রতিনিয়তই উঠছে। ছাত্রলীগের লাগাম এখনো টেনে ধরতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দুর্নীতি
সরকার ৩য় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় যে অঙ্গীকারগুলো করেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল- দুর্নীতিবিরো’ধী অভিযান। আর এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন। শুদ্ধি অভিযানে কয়েকজন যুবলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের মাঝ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের পর এই অভিযান গতিহীন হয়ে পড়েছে। এক অর্থে দূর্নীতি বিরো’ধী অভিযান মুখ থু’বড়ে পড়েছে। এটাকেও সরকারের একটা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন অনেক সাধারণ মানুষ।
সড়ক ও রেল দুর্ঘটনা
গত বছরে রেল এবং সড়ক দুর্ঘটনা যেন হুট করে বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে জনগণের আস্থাভাজন রেলপথে বেশ কয়টি বড় দুর্ঘটনা সরকার এবং রেল মন্ত্রণালয়কে বেশ বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছিল। এজন্য রেল মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছিল।
এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও সরকারের অন্যান্য অর্জনকে বেশ ম্লা’ন করে দিয়েছিল। সরকারের অবদান এবং ভূমিকা এখনো এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। অবস্থা পরিবর্তনে নতুন সড়ক পরিবহন আইন করার পরেও সেটি তেমন আলোর মুখ দেখেনি এখনো।
101