প্রবাস ডেস্ক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে আবুধাবি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আবুধাবিতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মাসদারের ব্যবস্থাপনায় ‘আবুধাবি সাস্টেইনেবিলিটি সপ্তাহে’ অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী ৩ দিনের জন্য আবুধাবি সফর করবেন।
জানা গেছে, আগামী রোববার (১২ জানুয়ারি) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আবুধাবির সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তিনি আবুধাবি পৌঁছাবেন।
আগামী ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় তার আবুধাবি ত্যাগ করার কথা রয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর আমিরাত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমরা নিজস্ব অর্থনীতির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা যে যে সেক্টরে উৎপাদন করেন সেই পণ্যের বাজার খুঁজবেন। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করবেন। আমরা নিজস্ব অর্থনীতির ওপর দাঁড়াতে চাই। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বস্ত্রমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্ববাজারে ২য় স্থানে অবস্থান করছে। বাজার ধরে রাখতে হলে কোন দেশে কোন ধরনের পোশাকের চাহিদা রয়েছে, তাদের পছন্দের রঙ কী, কোন সিজনে কোন পোশাক তারা পরে, কোন ডিজাইন কোন দেশের মানুষের পছন্দ, এগুলো খুঁজে বের করতে হবে। শুধু পোশাক শিল্প নয়, অন্যান্য শিল্পের সঙ্গেও যারা জড়িত আছেন, তারা সারা বিশ্বে বাজার খুঁজবেন। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে, সে অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবেন।
আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। যারা এ পোশাক ক্রয় করেন তারা যদি ১ ডলার করেও দামটা বাড়ান তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা মজবুত হবে। আমি জানি না, যারা রপ্তানি করেন তারা এটা করেন কি না। তবে আমি যখন কোনো দেশে যাই তখন আমাদের তৈরি পোশাক এবং অন্যান্য গুণগত যেসব পণ্য আছে, সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এসব পণ্যের কথা তুলে ধরি। তারা যেন আমার দেশ থেকে পণ্য ক্রয় করেন, সে বিষয়েও তাগিদ দেই। তবে আমি একা তুলে ধরলে হবে না। আপনারা যারা ব্যবসায়ী আছেন, তাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারাদেশে একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এসমস্ত অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। বিদেশিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পপতিরাও এখানে বিনিয়োগ করবেন। বাংলাদেশকে আমরা সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। পাট শিল্পের ওপর আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। পাট থেকে উন্নত সুতা হয়। তা ছাড়া প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সারা বিশ্বে পাটপণ্যের একটা চাহিদা আছে। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ছিল মাত্র ১ হাজার ৬শ টাকা। পরে তাদের বেতন ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে একসাথে এত টাকা বেতন বাড়ায় কি না। শুধু পোশাক শিল্প নয়, অন্যান্য সেক্টরেও আমরা সকলেরই বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি। এছাড়া পোশাকশিল্পের কর্মীরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেজন্য তাদের হোস্টেল, ডরমেটরি নির্মাণ করে দিয়েছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এরকম বিভিন্নভাবে আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা বেশকিছু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছি। যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাল (শুক্রবার) মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালন করব। এ ছাড়া আগামী বছরে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২০২১ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত আমরা একটা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেহেতু একটি বদ্বীপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা যেন ক্ষ’তির সম্মুখীন না হই, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ হাতে নিয়েছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ দেশের মানুষ যেন সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেই কর্মসূচি গ্রহণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রতিটি মানুষকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
আজ থেকে শুরু হয়ে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বস্ত্রমেলা চলবে। জাতীয় বস্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হরো- ‘বস্ত্রখাতের বিশ্বায়ন, টেকসই উন্নয়ন।’
এদিকে বস্ত্রখাতের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পদক দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।