অবশেষে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বানরগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করল বন বিভাগ

0

গাজীপুর প্রতিনিধি:

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সন্তোষপুর এলাকার সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পুড়ে আহত হওয়া বানরগুলোকে চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের চিকিৎসা কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সহায়তায় এ প্রাণীগুলোকে শুক্রবার রাতে সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সন্তোষপুর এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পল্লী বিদ্যুতের কাভারহীন উন্মুক্ত তারের সংস্পর্শে এসে আহত হচ্ছে বনের প্রাণীরা। এ নিয়ে সময় এখন ডটনেটে গত ৯ জানুয়ারি বিদ্যুতের তারে পুড়ে আহত বানরদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়, পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান আহত বানরগুলোর সুচিকিৎসা দিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ১০ জনের প্রতি। যার সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট সংযুক্ত করা হয়।

ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জানান, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বানরের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে। মূলত এর পরই টনক নড়ে প্রশাসনের।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আহত বানরদের ছবি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষু’ব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান সমাজের বিভিন্ন স্তরের সচেতন এবং সহানুভূতিশীল মানুষ। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য তাদের শা’স্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সন্তোষপুর শালবনে বানরের খাবার নিয়ে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসা। খাবারের দোকানগুলো ঘিরে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক বানর। বানর দেখতে আসা ২৫-৩০ জন দর্শনার্থী দোকানগুলো থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দিচ্ছেন।

সেখানে অন্তত ছোট-বড় ৫টি বানরকে ঝ’লসানো অবস্থায় দেখা গেছে। একটি বানরের হাত, আরেকটির পা পুড়ে ঝুলে রয়েছে। বানরগুলোর মুখ, হাত, পা ও শরীরের ক্ষ’তস্থানে প’চন ধরেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাইম বলেন, পার্কের চিকিৎসা কেন্দ্রে বানরগুলোর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উদ্ধারকৃত বানরগুলোর অধিকাংশই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝ’লসে গেছে।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসিম মল্লিক বলেন, সন্তোষপুর এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশ দিয়ে নতুন বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপন করায় বনে থাকা বানরগুলো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হচ্ছিল। এ সংক্রান্ত খবর দৃষ্টিগোচর হওয়ায় মানবিক কারণে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বানরগুলোকে উদ্ধার করে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার তাৎক্ষণিকভাবে সেই স্থান থেকে ৩টি বানরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের চিকিৎসা কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়। চিকিৎসার পর বানরগুলো সুস্থ হয়ে উঠলে স্ব-স্থানে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রাকিবুল হক এমিল জানান, মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ও নাওগাঁও ইউনিয়নে ২,৮৬৩.১৪ একর এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এক সময় এই বনে হরিণ, মেছোবাঘ, ভালুক, হনুমান, সজারু, শিয়াল, খরগোশসহ নানা প্রজাপতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। গাছ কে’টে বন উজাড় করায় দিন দিন বন্য প্রাণীগুলো প্রায় হারিয়ে গেছে।

সন্তোষপুর বনাঞ্চলে সাড়ে ৩ শতাধিক বানর রয়েছে। স্বভাবগতভাবে বানর সংঘ-বদ্ধ প্রাণী। একটি বানর আহত হলে অন্য বানররা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু এই বনের ভেতর কভারবিহীন উন্মুক্ত তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় বিদ্যুৎস্পর্শে পুড়ে যাচ্ছে বানররা। যখন একটি বানর আহত হচ্ছে তখন অন্য বানররা তারে রক্ষা করতে গিয়ে তারাও আহত হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মুখ, হাত, পা ও শরীর ঝ’লসে যাচ্ছে বানরদের। গত কয়েক দিনে অন্তত ২০টি বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসকে বিষয়টি জানালেও এ ব্যাপারে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্তোষপুর বনের ভেতরে অসংখ্য বন্যপ্রাণী থাকার পরও পল্লী বিদ্যুতের লাইন ডিজাইন করার সময় বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি।

গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে উন্মুক্ত তারের পরিবর্তে দ্রুত কভারিং ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানার নির্দেশ দেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রশাসন সক্রিয় হওয়ার পর বানরগুলোর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ইতিমধ্যেই বনাঞ্চলের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় বিদ্যুতের উন্মুক্ত তার পরিবর্তন করে কভার তার দেওয়া হয়েছে। তথ্যটি দেন সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার মকবুল হোসেন।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!