অর্থনীতি ডেস্ক:
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির ১৫ দিনেই প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশ।
সবমিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাড়ে ৬ মাসে (২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি) ১ হাজার ৩০ কোটি (১০.৩৬ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৯৬ কোটি (প্রায় ১ বিলিয়ন) ডলার এসেছে বাংলাদেশে। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে ২ সপ্তাহে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি।
অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৯৪০ কোটি ৩৪ লাখ (৯.৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিলো বাংলাদেশে। যা ছিল গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫.৪৬ শতাংশ বেশি।
২০১৯ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে গত ডিসেম্বরে।
এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ; ২০১৯ সালের মে মাসে। আর রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়ে ধাক্কার পরও বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
২% হারে প্রণোদনার কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, রেমিট্যান্সে সুবাতাস বইছেই। প্রতি মাসেই বাড়ছে রেমিট্যান্স ১৫ দিনে ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স সত্যিই সুসংবাদ।
বাংলাশে ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ‘সুখবর’ নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর।
প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অগাস্টে আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অক্টোবর মাসে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বর মাসে এসেছিল ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছর। ঐ বছরে ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯.৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭.৩২ শতাংশ।
হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপা’চার নিরুৎসাহিত করতে বর্তমানে রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ওই ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ আশা করছেন ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। প্রণোদনা দেওয়ায় এবার প্রবাহ খুবই ভালো। অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বর্তমানে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রিজার্ভ ৩২.১০ বিলিয়ন ডলার
রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ খানিকটা কমে এসেছিল। বৃহস্পতিবার দিন শেষে তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ৩২.৬০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৩১.৬০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল।
গত ২ মাসে তা বেড়ে ৩২.৮০ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। ৭ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার দেনা পরিশো’ধের পর আবার কমে যায়। ১ সপ্তাহ না যেতেই তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল ২ মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
৪৩ কোটি ডলার বিক্রি
এদিকে বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ায় ডলার ছাড়া অ’ব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যংক। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫ মাসে ৪৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে বিক্রি করে ৩ কোটি ৬০ ডলার, আগস্টে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
চাহিদা না থাকায় সেপ্টেম্বরে কোনো ডলার বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অক্টোবরের মাঝামাছি সময় থেকে চাহিদা বেড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সাধারণত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাহিদা তৈরি হলে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়।
গত ১ মাস ধরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।