কৃষি বার্তা ডেস্ক:
চুই বাংলাদেশের একটি অ’প্রচলিত মশলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল এসব জেলার চাষীদের কাছে এটি একটি অর্থকরী সমাদৃত মশলা।
চুই আসলে লতা জাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর এবং পাতা পান পাতার মত সবুজ রঙের। এর কাণ্ডটিই মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চুই সাধারণত ২ প্রকার। একটির কাণ্ড আকারে বেশ মোটা, অন্যটির কাণ্ড চিকন। প্রাকৃতিকভাবে এটি ভেষজগুণ সম্পন্ন গাছ। চুই ঝালের একটি আলাদা গন্ধ রয়েছে যা তরকারি বা রান্না করা মাংসে আনে আলাদা আমেজ। অন্য গাছের সাথে আশ্রয় নিয়ে এরা বেড়ে উঠে। মোটামুটি সব গাছের সাথেই বাড়ে।
চুই ঝাল গাছ চাষ করার পদ্ধতি:
জলবায়ু ও মাটি: উঁচু জমিতে চাষ করলে চুই এর আবাদ ভাল হয়।
চারা তৈরি: কাটিং দ্বারা এর বংশবিস্তার করা হয়। তবে লতার কাটিংয়ে বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয় এবং ফলন দ্রুত পাওয়া যায়।
জমি তৈরি ও চারা রোপন:
১। বর্ষাকালে চাষের উপযুক্ত সময়। মাটিতে কাটিং লাগাতে হয়। কাটিং থেকে নতুন চারা বের হলে তা কোন ফল বা কাঠ গাছে দিয়ে দিলে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে।
২। আম, মেহগণি, সুপারি, শিমুল গাছে ভালো হয়। তবে আমে গাছে বেড়ে ওঠা চুই সবচেয়ে বেশি ভালোমানের হয়। বীজতলায় বীজ ভিজিয়ে ফেললে সেসব বীজ থেকে চারা গজায়।
৩। চুই গাছের ফল পাকলে তার উপরের নরম আবরণ ফেলে দিয়ে রোদে শুকিয়ে বীজ রেখে দিলে তা অনেকদিন ভালো থাকে। লতাজাতীয় এ গাছটি দেখতে একদম পান গাছের মতো।
৪। বীজ ও লতার কাটিং দিয়ে বংশবিস্তার করা যায়। আরোহী গাছের গোড়ায় সামান্য গোবর মাটি মিশিয়ে লতার ১টি গিট রোপণ করলে ক´দিন পরেই বাড়তে শুরু করে। ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই লতা কাটা যায়।
সার প্রয়োগ/ ব্যবস্থাপনা: গোবর সার এর জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও চুই চাষ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গর্তের মধ্যে জৈব সার দিলে এর বৃদ্ধি ভাল হয়।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন: অতিবৃষ্টি হলে চুই গাছের গোড়ায় পানি জমে গেলে গাছের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। সে জন্য গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সে জন্য সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।
আগাছা ও নিড়ানী: খেয়াল রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন আগাছা না জন্মে। আগাছা জন্মালে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। এবং চুই ক্ষেত সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
চুই ঝালের ব্যবহার:
মূলতঃ রান্নার জন্যে চুই ঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুই ঝালে ০.৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল থাকে। চুই এর শিকড়ে রয়েছে ১৩.১৫ শতাংশ পিপারিন।
আসুন এবার জেনে নিই চুই ঝালের উপকারিতা:
রুচি বর্ধক: মুখের রুচি বাড়াতে খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধাম’ন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ক্যানসার প্রতিরো’ধে: এতে প্রচুর পরিমাণে আইসোফ্লাভোন ও অ্যালকালয়েড নামক ফাইটোক্যামিকাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
হৃদরোগ প্রতিরো’ধে: দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে এটি হৃদরোগ প্রতিরো’ধ করতে সাহায্য করে।
পাকস্থলীর সমস্যা দূরীকরণে: পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্র’দাহ দূর করে। তাছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকা’ঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মানসিক প্রশান্তিতে: স্নায়ুবিক উত্তে’জনা ও মানসিক অ’স্থিরতা প্রশমন করে।
ব্যথা দূর করতে: আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করে শরীর সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
ঘুমের ও’ষুধ হিসেবে: এটি ঘুমের ও’ষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
প্রসূতি ব্যথা: প্রসূতি মায়ের প্রসব-পরবর্তী ব্যথা প্র’শমনে ভালো কাজ করে চুই ঝাল। সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা কমাতে চুই ঝাল ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ও’ষুধ হিসেবে: অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস রোগের ও’ষুধ হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরো’ধে চুই ঝাল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরো’ধে সাহায্য করে।
সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মরিচের বিকল্প হিসেবে চুই ঝালের জনপ্রিয়তা বাড়লে দেশের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে ভেষজ গুণ থাকার কারণে অনেক রোগব্যাধির আক্র’মণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
সূত্র: কৃষি বার্তা