অর্থনীতি ডেস্ক:
নিত্য প্রয়োজনীয় মশলা জাতীয় পণ্য এলাচ। মিষ্টি বা ঝাল সব রকম খাবার তৈরিতে প্রায় মশলাটির ব্যবহার হয়। আর এই মশলার কেজি এখন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। গত সপ্তাহেও যার মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা। আর গত বছরের এই সময়ে ১ কেজি এলাচ বিক্রি হতো প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকায়। রাজধানীর বেশ কয়েকজন মশলা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
মানিকনগর পুকুরপাড় এলাকার মশলা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভালো মানের এলাচ এখন ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। গত বছরের এই সময়ে ১ কেজি এলাচ বিক্রি হতো প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকায়। অর্থাৎ ১ বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি এলাচের মূল্য বেড়েছে ৫ হাজার টাকারও বেশি। তবে মশলা ব্যবসায়ীদের চেয়ে স্থানীয় মুদি দোকানদাররা বেশি মূল্যে এলাচ বিক্রি করছেন।
মানিকনগর এলাকার মুদি দোকানদার মাহাতাব মিয়া বলেন, ১০০ গ্রাম এলাচ ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, মোকামে এলাচের মূল্য বেড়ে গেছে। এলাচের মূল্য এতটা বেড়ে যাওয়ার কথা অনেকেই অ’বিশ্বাস করছেন। ফলে এলাচ কিনতে এসেও ক্রেতাদের অনেকে চলে যাচ্ছেন।
একই এলাকার ক্রেতা রাশেদা বেগম প্রতিবেদকের সামনেই ১০০ গ্রাম এলাচ কিনতে এসেও এর মূল্য অ’স্বাভাকি বাড়ার কারণে ৫০ গ্রাম কেনেন ৩২৫ টাকায়।
মশলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২ মাস আগেও প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার টাকায় পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, পার্শ্বর্তী দেশ ভারতে এবার এলাচের উৎপাদন কম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, বিশ্ব বাজারে এলাচের সং’কট দেখা দিয়েছে। ভারতে গতবারের মতো এবারও এলাচের ফলন ভালো হয়নি। যে কারণে ভারতও এখন গুয়াতেমালা থেকে এলাচ কিনছে। যার ফলে গুয়াতেমালায় এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে তারা মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও এর মূল্য বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মূলত গুয়াতেমালার এলাচ আমদানি হয়।
এলাচের মূল্য যে অ’স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, তার প্রমাণ মেলে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেই। সংস্থাটির হিসাবে, গত ১ বছরে এলাচের মূল্য বেড়েছে ২০০ শতাংশ। আর গত ১ মাসে এই পণ্যটির মূল্য বেড়েছে ৬৩.৬৪ শতাংশ। টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহে যে এলাচের মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা। এখন সেই এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। ১ বছর আগে এই এলাচের মূল্য ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে এলাচের চাহিদা ৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫ হাজার মেট্রিক টন।
জানা গেছে, ভারতের কেরালা রাজ্যে গত ২ বছর ধরে এলাচির সরবরাহ কমছে। বৈ’রী আবহাওয়ার কারণে সেখানে গতবারের মতো এবারও এলাচের ফলন কম হয়েছে। যে কারণে সেখানেও এর মূল্য বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এলাচের মূল্য এমনিতেই চ’ড়া থাকে।
মূলত বিয়ে, মেজবান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের খাবারে অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সং’কট তৈরি করেন। তবে, এখন বেড়েছে মূলত ভারতে এই পণ্যটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে। মশলার পাইকাররা জানান, কেরালায় গত বছরের বন্যা আর এই বছরের খরায় এলাচের উৎপাদন ব্যাপক কমেছে। যে কারণে এলাচের মূল্য ২ বছর ধরে বাড়তি। তবে, গত ২ মাসে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৬ সালে সাধারণ এলাচের মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এলাচ এখন বাঙালির রান্নায় দরকারি পণ্য। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য যতটা না বেড়েছে, তারচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশের বাজারে।
তিনি উল্লেখ করেন, এলাচের মূল্য অ’স্বাভাবিকভাবে যারা বাড়িয়েছেন, তারা মূলত অতি মুনাফালোভী। বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো করে এই পণ্যটির মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন।
173