বিশেষ প্রতিবেদন:
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমরা’স্ত্র নির্মাণকারী দেশ ইসরায়েলের তৈরী ট্যাংক কিলার হিসেবে বিশ্বখ্যাত Spike ATGM যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে।
জানা গেছে, এটি সংগ্রহ করা হয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে। এই মিসাইলের কার্যকারিতার জন্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ATGM টি সংগ্রহ করেছে। তবে যেহেতু ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় ইসরায়েলি কোন সমরা’স্ত্র ক্রয় ও ব্যবহার করে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মূলতঃ Spike এন্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ক্রয় করা হয়েছে থার্ড পার্টি সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর নিজেদের জন্য ইসরায়েলের কাছ থেকে এসব মিসাইল ক্রয় করেছিল, পরবর্তীতে বিশেষ কারণে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট এসব মিসাইলের একাংশ বিক্রী করে দেয়।
স্পাইক এটিজিএমের বেশ কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট আছে যার মধ্যে আমরা SPIKE-MR (GILL) ভ্যরিয়েন্টটি সংগ্রহ করা। এই MR ভ্যারিয়েন্টটি স্পাইক ফ্যামিলির মিডিয়াম রেন্জ ভ্যারিয়েন্ট। যার সর্বোচ্চ রেন্জ ২,৬০০ মিটার বা ২.৬ কি.মি.। এই মিসাইলটি Fire and forget type এন্টি ট্যাংক মিসাইল।
ফায়ার এন্ড ফরগেট কী?
এই মেথডটি মূলত গাইডেড মিসাইলের অন্যতম বহুল ব্যবহৃত টেকনিক। এই মেথডের মিসাইলগুলোর বিশেষত্ব হল, ফায়ার করার পর অপারেটরকে আলাদাভাবে মিসাইলকে গাইড করে নিয়ে যেতে হয়না। এক্ষেত্রে টার্গেট লক করার পর অপারেটর মিসাইল ফায়ার করার পর তার কাজ শেষ। বাকি কাজ মিসাইলের গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে থাকা Active radar homing বা infrared homing অপটিক্স করে। অর্থাৎ মিসাইলটি তার রেঞ্জে থাকা লক্ড টার্গেটকে নিজেই খুঁজে নিবে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মিসাইলটিকে টার্গেটের দিকে নিয়ে যাবে।
SPIKE-MR রাউন্ডটির ওজন ১৪ কেজি, Command and launch unit (CLU) এর ওজন ৫ কেজি, থার্মাল সাইটের ওজন ৪ কেজি। মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই পুরো সিস্টেমটিকে রেডি টু ফায়ার মুডে আনা যায়। এবং পরবর্তী ফায়ার এন্ড ফরগেট টাইপ হওয়ার কারণে যেহেতু মিসাইলকে গাইড করা লাগেনা, সেহেতু প্রথম মিসাইল ফায়ারের পরবর্তী ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই রিলোড করে রেডি টু ফায়ার মুডে আনা যায়। স্পাইক এটিজিএম মিসাইলের ওয়ারহেড হিসেবে Tandem charged HEAT ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয়েছে।
Tandem charged HEAT ওয়ারহেড কী?
HEAT হল হাই এক্সপ্লোসিভ এন্টি ট্যাংক ওয়ারহেড এর সংক্ষিপ্ত রূপ। আর এই HEAT এর বিভিন্ন ফায়ার মেথডের একটি হল টেন্ডেম চার্জড হিট মেথড। এতে একই ওয়ারহেডে ২ ধরনের মেকানিজম কাজ করে। প্রথম ওয়ারহেডটি ট্যাংকের এক্সপ্লোসিভ রিয়্যাক্টিভ আর্মার ভেদ করে দেয় এবং ২য় ওয়ারহেডটি সরাসরি ট্যাংকের মূল বডিতে আঘা’ত করে ভেতরে চলে যায় এবং বি’স্ফোরণ ঘটায়।
স্পাইক এটিজিএমে 10X অপটিক্যাল সাইট ব্যবহার করা হয়েছে। মিসাইলটিকে গাইড করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে Infrared homing (এটি এক ধরনের প্যাসিভ গাইডেন্স সিস্টেম। যেটি টার্গেটের বডি হতে উৎপন্ন তাপকে পরিমাপ করতে এবং সেটিকে ট্র্যাক করে এগিয়ে যেতে সক্ষম। বিশেষ করে ইঞ্জিনের তাপ সহজেই এই সিস্টেমের কাছে ধরা পড়ে)। ট্যাংক যেহেতু এয়ারক্রাফটের তুলনায় কম ম্যানুয়াভারেবল, সেহেতু ইনফ্রারেড হোমিং মিসাইলকে ধোঁকা দেওয়া তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না।
এই মিসাইলের আরেকটি বিশেষত্ব হল এর সফট লঞ্চিং ক্যাপাবিলিটি। এই মেথডে মিসাইলটি ফায়ার করার সাথে সাথে এক্সপ্লোশন হয়ে লঞ্চ টিউব থেকে বের হয়না। কারণ ব্যাক ফ্লাশের কারণে গানারেরও ক্ষ’তি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এই সফট লঞ্চিং মেথডে ফায়ার হওয়ার পর লঞ্চ টিউব হতে একটি মোটর মিসাইলটিকে বেশ কিছুটা দূরত্বে নিয়ে যায়। এরপর মিসাইলের ইঞ্জিন চালু হয়। এতে যে ফ্ল্যাশ উৎপন্ন হয় তা থেকে গানার নিরাপদে থাকে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পাইক এটিজিএম কিন্তু এখনো অপারেশনাল না। ভবিষ্যতে প্রয়োজনের তাগিদে উন্নত প্রযুক্তির সমরা’স্ত্র ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ট্রেইনিং পারপাসে এই এটিজিএমটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
© ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম