৩২ বছর পর চট্টগ্রাম গণহ’ত্যা মামলায় ৫ জনের ফাঁ’সির রায়

0

আইন আদালত ডেস্ক:

২৪ জানুয়ারি, ১৯৮৮ সালে স্বৈ’রাচার এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গু’লি চালিয়ে ৩২ জনকে হ’ত্যা মামলার রায়ে ৫ জনকে ফাঁ’সির আদেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র ৪ দিন আগে এ রায় এলো।

আজ ২০ জানুয়ারি, সোমবার বিকেল ৩টার কিছু পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাইল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

যাদের মৃ’ত্যুদ’ণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেন- মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ও আব্দুল্লাহ। এরা প্রত্যেকেই পুলিশের সাবেক সদস্য এবং একমাত্র গোপাল চন্দ্র পলাতক, বাকিরা কারাগা’রে আছেন।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গু’লি চালালে ২৪ নেতাকর্মীসহ ৩২ জন মা’রা যান। আহত হন ৩ শতাধিক মানুষ।

সেদিন শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গু’লি চালালেও নিতান্তই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। শেখ হাসিনার উপর গু’লি করার সময় এক পুলিশ সদস্য মেশিনগানের গু’লির বেল্ট খুলে ফেলায় তিনি বেঁচে যান। এ সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবী ও নেতা কর্মীরা মানব ঢাল তৈরী করে শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে আইনজীবী সমিতি অফিসে নিয়ে রক্ষা করেন।

১৯৯৬ সালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কর্মকর্তা কাদের খান আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করার পর ২০০০ সালের মে মাসে আসামিদের বিরু’দ্ধে অভিযোগ গঠন (চার্জ ফ্রেম) করা হয়। ১৬৮ জনের মধ্যে ৪১ জন সাক্ষী ইতিমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর ৮ বছর যাবত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় বা রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের হাজির করতে না পারায় মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।

জানা গেছে, ৮ বছরে মাত্র ১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১৮ সালে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় সাক্ষীদের হাজির না করা প্রসঙ্গে এই আদালতের সাবেক বিচারক গোলাম সরওয়ার এক আদেশে বলেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি মোতাবেক আদালতে সাক্ষী হাজির করার দায়িত্ব সংশিষ্ট পুলিশের। এরই মধ্যে মা’রা গেছেন মামলার বাদি শহীদুল হুদাও।

আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের ৮ সদস্যকে আসামি করে ২য় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

৫ আসামির মধ্যে ৩ জন মা’রা গেছেন। তারা হলেন- চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম।

জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির ওই দিনে বৃষ্টির মতো এলোপাথাড়ি গু’লিতে শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান মোট ৩২ জন ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী জনতা। আহত হয় আরও প্রায় ৩ শতাধিক। নৃ’শংসতার এক পর্যায়ে পুলিশের কড়া পাহারায় নিহ’ত অধিকাংশের লা’শ রাতের অন্ধকারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নগরীর অভয়মিত্র মহাশ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

অন্যদিকে চলে লা’শ গু’ম করার চেষ্টা। এই ঘটনার ৪ বছর পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কাজী রকিবুল হুদা এবং কোতয়ালি জোনের পুলিশ পরিদর্শক (পিআই) গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডলসহ মোট ৪৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ইতিহাসে দিনটিকে চট্টগ্রাম গণহ’ত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

পুলিশের গু’লিতে যারা নিহ’ত হয়েছিলেন-

মোহাম্মদ হাসান মুরাদ, সীতাকুন্ড থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন শামীম, ছাত্রনেতা স্বপন কুমার বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা এথেলবাট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, ক্ষেতমজুর নেতা রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, হোটেল শ্রমিক ডি কে চৌধুরী, ছাত্রনেতা সাজ্জাদ হোসেন, আবদুল মান্নান,

সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মোহাম্মদ কাশেম, পলাশ দত্ত, আবদুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ এবং শাহাদাত।

শেয়ার করুন !
  • 968
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!