‘আমি আপনার পিএস নই, দলের মহাসচিব’- তারেককে ফখরুল

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

‘…এভাবে বলতে পারেন না, আমি আপনার পিএস নই। আমি দলের মহাসচিব। এভাবে আমাকে ডিক্টেট করলে তো আমি দল চালাতে পারবো না।’ আজ দুপুরে তারেক জিয়ার টেলিফোনে নির্দেশনায় বির’ক্ত হয়ে এভাবেই জবাব দেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি কার্যালয় সূত্রে ঘটনার সূত্রপাত দিন দুয়েক আগে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপির দুই প্রার্থী ইশরাক এবং তাবিথের বিরু’দ্ধে মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতির মামলা নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। এর ফলে ভোটাররা প্রভাবিত হতে পারে, তাই এসব নিয়ে আলাপ করতে লন্ডন থেকে তারেক জিয়া টেলিফোন করেন বিএনপি মহাসচিবকে। সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্র’তিবাদ করতে বলেন। কিন্তু এ তারেক জিয়ার পরামর্শগুলো মির্জা ফখরুলের পছন্দ হয়নি।

তাৎক্ষণিক ফোন রেখে দিলেও দুপুরে আবার তারেক জিয়া টেলিফোন করেন দলের মহাসচিবকে। এ সময় তাবিথ আউয়াল মিডিয়াকে “ষ’ড়যন্ত্র” দাবি না করে কেন “মন্তব্য করব না” বলে এড়িয়ে গেলেন, তা নিয়ে তাবিথকে যথাযথভাবে ব্রিফ না করার জন্য মির্জা ফখরুলকে দায় দেন।

এক পর্যায়ে ফখরুলকে তারেক বলেন, ‘আপনি নোট নেন।’ এরপর বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন তারেক জিয়া। এ সময় বির’ক্ত বিএনপি মহাসচিব বলে ফেলেন, ‘তাবিথ আর ইশরাকের বিরু’দ্ধে অভিযোগগুলো পুরোনো। এসবের তথ্য উপাত্তগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।’ এ পর্যায়ে অ’সহিষ্ণু তারেক বলে ফেলেন, আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না। আপনি না পারলে রিজভীকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করান।

বিএনপি কার্যালয়ের সূত্রটি জানায়, শুধু বিএনপি মহাসচিব নন, অধিকাংশ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে ‘তারেক জিয়া’ হলো এক বির’ক্তির নাম। তার সাথে দ্ব’ন্দ্ব হলে দলীয় রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব না। আর এসব কারনেই দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, তারেক সাহেব মানুষকে সম্মান দিতে জানেন না। প্রায়ই তু’চ্ছ তা’চ্ছিল্য করে কথা বলেন। কারও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। তিনি যা বোঝেন তাই দলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এভাবে তো দল চলতে পারে না।

অন্য একজন নেতা বলেন, উনি শুধু ব্যস্ত তার নিজের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। তার পাসপোর্ট, তার মামলা ইত্যাদি নিয়েই সারাদিন নির্দেশ দিতে থাকেন। তিনি ছাড়া তার কাছে আর কোনো কিছুই মুখ্য নয়।

এর আগেও তার সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের সাথেও কথা কা’টাকাটি হয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে নিজের সন্মান নিয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান লে. জেরারেল মাহবুব। ক্রমশ সিনিয়র নেতারা তারেককে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেছে।

সিনিয়র নেতাদের একজন বলেন, তারেক সাহেব আমাদের সঙ্গে কথা বলেন চাকর বাকরের মতো। প্রায়ই তিনি এমন সব শব্দ ব্যবহার করেন যা অ’শোভন। তার চরিত্রের এই সব দিক পরিবর্তন না হলে, তার সঙ্গে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিএনপির কিছু তরুণের মধ্যে অবশ্য তারেক জিয়া এখনো অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে অঙ্গ সংগঠনগুলোতে তারেকের প্রভাব একচ্ছত্র। সিনিয়র নেতারা এখন এটাও ভয় পান। তারেকের সঙ্গে যুক্তি দিয়ে কেউ কথা বললেই দু-একদিন পরই তার উপর চ’ড়াও হন বিএনপির তরুণ তুর্কীরা।

এসব কারনে গত বছর অন্তত ৫ জন নেতা দলের অঙ্গ সংগঠনের কর্মীদের হাতে না’জেহাল হয়েছেন। মির্জা ফখরুলের ভাগ্যেও কি সেরকম কিছু অপেক্ষা করছে?

শেয়ার করুন !
  • 11.4K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!