বিশেষ প্রতিবেদন:
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আজ তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। সেখান থেকে বেরিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলেন, তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যা করা দরকার তা করবেন। এ কথার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, তারা প্যারোলের আবেদন করবেন এবং এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার সম্মতি পেয়েছেন।
গত ২ বছর ধরেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ নিয়ে নানা রকম আলোচনা ছিল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তার দল বিএনপি দুর্বার আন্দোলন করবে। আর দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন, আইনী ল’ড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন।
কিন্তু দুর্বার আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেই সাথে আইনী ল’ড়াইয়ের ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সব সম্ভাবনার পথ এখন রু’দ্ধ। আর এ কারণেই পরিবার এগিয়ে এসেছে।
অবশ্য ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তার পরিবার সরকারের সঙ্গে একটি আপোস রফার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক জিয়া এবং বিএনপির একটি বড় অংশের আপ’ত্তির কারণে এই সমঝোতা এগোয়নি। যদিও বেগম খালেদা জিয়া আস্থা রেখেছিলেন এবং তিনি মনে করেছিলেন দল এবং তার পুত্র হয়তো শেষ পর্যন্ত তার মুক্তির ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু গত প্রায় ২ বছরে দল এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়া তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। এর মাধ্যমেই একটি বিষয় স্পষ্ট, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে তার বড় ছেলে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া হয়তো আন্তরিক নয়। দলত্যাগী শীর্ষ নেতাদের ধারণা, বিএনপির একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগা’রে রেখে ফায়দা হাসিল করতে চায়।
তাদের ধারণা, দলেরর মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগা’রে রেখে সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের অন্য সদস্যরা, যেমন- তার বোন, ভাই এবং প্রয়াত কোকোর শ্বশুরবাড়ির পরিবার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে গত কিছুদিন ধরে আবার তৎপর হয়েছেন।
প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান কিছুদিন আগে দেশে এসেছিলেন এবং তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। আজ বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলের ব্যাপারে রাজি হয়েছেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা যখন বলেছেন, সাথে সাথে বিএনপির মধ্যে এর তীব্র প্র’তিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, এরকম ঘটনা ঘটলে সেটা হবে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মহ’ত্যার সামিল। তারা মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির যে অর্জন তা এই প্যারোলের মাধ্যমে ধূলিস্মাৎ হয়ে যেতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার বের হয়ে আসার পর পরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাদেরকে প্যারোলের আবেদন করার আগে দলের সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন বিএনপির নেতারা বিশেষ করে মহাসচিব বিশ্বাসঘা’তকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি বেগম খালেদা জিয়ার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
বেগম খালেদা জিয়ার ধারণা, মির্জা ফখরুল সরকারের সাথে নানারকম গোপন আঁতাত করে বিএনপিকে দুর্বল করে ফেলেছেন। এজন্যই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুলকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, প্যারোল বা সরকারের সাথে আপোসের ব্যাপারে তারা বিএনপিকে সঙ্গে নিবে না। এই সিদ্ধান্তে বিএনপির ভেতর তীব্র প্র’তিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক বিষয় বিবেচনা না করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেনদরবার করছে। এটা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার আজকের এই পরিণতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তার পরিবারের সদস্যরা। যাদের সীমাহীন লু’ণ্ঠনের কারণে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা’চ্যুত হয়েছেন। আর এ কারণেই তারা দলের এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনা না করে কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলে জন্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছে।
সিটি নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে দল এবং পরিবারের মুখোমুখি অবস্থান বিএনপির জন্য আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে।
বাংলাইনসাইডার