ফিচার ডেস্ক:
১ কোটি ৭১ লাখ জনসংখ্যার দেশটির নাম নেদারল্যান্ডস। তবে দেশটির কোনো জেলখানায় গরু খোঁজা করেও আপনি একজনও কয়েদির সন্ধান পাবেন না। সোজা কথা হচ্ছে, বর্তমানে দেশটির কারা’রক্ষীদের হাতে ‘মাছি তাড়ানো’ ছাড়া আর কাজ নেই বলা যায়। সরকার জানিয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশটিতে অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে আসবে ০.৯%। এমন অবস্থায় দেশটির রক্ষীরা চাকরি হারানোর শ’ঙ্কায় রয়েছেন।
খোঁজ-খবরে জানা গেছে, ২০১৬ সালে নেদারল্যান্ডসে মোট কয়েদির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯ জন। ২ বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ তে এসে তা দাঁড়ায় শূন্যের কোঠায়। এখনও সেই অবস্থা বিরাজমান। ভূ’তুড়ে নীরবতা যেন ভর করেছে কয়েদিশূন্য কারাগা’রে!
প্রসঙ্গত, দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতিচর্চা, রাষ্ট্রব্যবস্থাই নাগরিকদের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে দীর্ঘদিন ধরে। দেশটিতে ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে কাউকে জোরপূর্বক অপরাধ থেকে দূরে রাখার মত অপ’সংস্কৃতি নেই। শতকরা ৬৭.৮ ভাগ নাগরিক ধর্মে অনাগ্রহী এবং নাস্তিকতায় বিশ্বাসী। ২৪.৪ ভাগ খ্রিস্টান, ৫.৮ ভাগ ইসলাম এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও বাহাইসহ অন্যান্য ২ ভাগ। ধর্মহীনদের প্রাধান্য বেশি হওয়ায় নেদারল্যান্ডে মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহি’ষ্ণুতা, সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতির চর্চাটা পোক্ত। যার ফলে অপরাধ প্রবণতা এখানে নেই বললেই চলে।
লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডস-এর সবগুলো জেলখানা এখন কয়েদিশূন্য, সেলের কক্ষগুলো খা খা করছে। কারা প্রশাসনের অধীনে মোট ২ হাজার কর্মচারী ছিল। তবে কয়েদি কমতে থাকায় তাদের মধ্য থেকে ৭০০ জনকে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়। কিন্তু কয়েদিসংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় এখন বাদবাকি ১ হাজার ৩০০ জনের চাকরিও শ’ঙ্কার মুখে পড়েছে। নেদারল্যান্ডস সরকার তাদের জন্য অন্যান্য দপ্তরে চাকরির তালাশ করছে।
তবে কারাব’ন্দি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের এই সৃষ্টিশীল কৌশলের প্রশংসা করছেন দুনিয়াজুড়ে অনেকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এমনকি যুক্তরাজ্য পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত কারাব’ন্দি নিয়ে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে ডাচদের এই সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা প্রশংসা পেতেই পারে।
প্রসঙ্গত, নেদারল্যান্ডসকে দুনিয়ার নিরাপদতম স্থানগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। এখানে সাজা পাওয়া কয়েদিরাও দ্রুত শুধরে নেয় নিজেদেরকে। তারা খেলাধুলা, বিনোদনসহ সব ধরনের সুযোগ পায়। অনেককে তো নিজ নিজ বাড়িতেই ব’ন্দি বা গৃহব’ন্দির ‘সুযোগ’ দেয়া হয়। দেশজুড়ে ইলেক্ট্রনিক অ্যাঙ্কল মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে যার সূত্রে এসব সম্ভব হচ্ছে।
এই পদ্ধতিতে কয়েদির পায়ে একটি বিশেষ ধরনের ইলেক্টনিক ডিভাইস পরানো হয়। যদি কোনো কয়েদি তার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থান থেকে বাইরে বেরোতে যায় তবে একটি বিশেষ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (বেতার তরঙ্গ) চলে যায় সংশ্লিস্ট দপ্তরের রিসিভারে। এর ফলে পুলিশ দ্রুতই তাকে ধরে ফেলতে পারে।
কয়েদিদের ব’ন্দি রাখার এই পদ্ধতির কারণে দেশটিতে ক্রমশ খালি হয়ে যেতে থাকে জেলখানাগুলো; একই সঙ্গে অপরাধের মাত্রাও কমতে থাকে। খালি হয়ে যাওয়া জেলখানার বেশ কয়েকটিতে আজকাল খোলা হয়েছে স্কুল, আবাসিক হোটেল ও কফিশপ।
বিবিসি, এনবিটি