আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে অ’স্থির হয়ে উঠেছে ভারত। দিল্লির পর মেঘালয়েও দা’ঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। বিরো’ধী ও সমর্থকদের সংঘ’র্ষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের দিল্লিতে দফায় দফায় সংঘ’র্ষে ৪২ জনের প্রাণহা’নি ঘটেছে। আহত হয়েছেন ২ শতাধিক। মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে। দোকান-পাট, বাড়িঘর তছনছ হয়েছে।
যেই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এত কিছু, সেখানে কি-না খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরই নেই নাগরিকত্বের কোনো কাগজপত্র! জন্মসূত্রে তিনি ভারতীয়। তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) মোদির নাগরিকত্ব নিয়ে এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে এমনটাই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও)।
ভারতের প্র’ভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি শুভঙ্কর সরকার নামে এক ব্যক্তি আরটিআই-এর মাধ্যমে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর নাগরিকত্বের কাগজপত্র রয়েছে কি-না। তারই উত্তরে পিএমওর সচিব প্রবীণ কুমার জানান, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী জন্মসূত্রেই ভারতীয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষো’ভের মধ্যেই এই তথ্য চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে খোদ রাজনৈতিক মহলে।
মোদির নাগরিকত্বের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জবাবকে অ’স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। সিমি পাশা নামের এক প্রবীণ সাংবাদিক প্রশ্ন তুলেছেন, ১৯৫৫ সালের ভারতের নাগরিকত্ব আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যদি তার নাগরিকত্ব নিবন্ধনের প্রয়োজন না হয়, তাহলে অন্যদের বেলায় এ নির্দেশ কেন?
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এর আগে একাধিকবার জানানো হয়, ২০১১ ও ২০১৫ সালের জাতীয় জনগণনা পঞ্জি অনুসারে যাদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে, এই পরিচয়পত্র যাদের কাছে পাওয়া যাবে না তারা নাগরিক না।
তবে দেশের জনগণের বড় অংশের কাছেই সেই পরিচয়পত্র নেই। আর এ কারণেই বিরো’ধীরা বরাবর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন- যদি এই বিরাট গোষ্ঠী দেশের নাগরিকই না হয়ে থাকে, বিজেপি তাহলে কাদের ভোটে পেয়ে ক্ষমতায় এল? অবশ্য তার জবাব দেননি মোদি।
নতুন নাগরিকত্ব আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্থান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি জমানো হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা নাগরিকত্ব পাবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই আইনে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া মুসলিমদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোনও কিছুই বলা হয়নি।
গত বছর ভারতের পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে সব ধর্মের মানুষ এর বিরো’ধিতায় বিক্ষো’ভ শুরু করে। বিক্ষো’ভ দম’নে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর সহিং’স অভিযানে কয়েক ডজনের বেশি মানুষের প্রাণহা’নি ঘটেছে।
গত বছরের আগস্টে আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকা প্রকাশ হয়। এই তালিকা থেকে সেখানকার প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব হারান। এই ১৯ লাখ মানুষ তখন থেকেই তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, আসামে অ’বৈধ অনু-প্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বাস্তবায়নের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে জমি এবং ব্যাংকের কাগজপত্রের নথি গ্রহণ করে ভারত সরকার।
তবে দেশটির আদালত বলেছেন, ভোটার আইডি কার্ড, জমির রাজস্বের রসিদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর (প্যান) কার্ডের কোনোটিই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কয়েক দশক ধরে ভারতে বসবাস করে এলেও গত বছরের আগস্টে এনআরসির পর বিদেশি ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এক নারী আবেদন করলে আসামের গুয়াহাটি হাইকোর্ট তার এ আবেদন না’কচ করে দেয়।
আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরির পর অসংখ্য মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের ‘ডিটেনশন’ ক্যাম্পে ব’ন্দি রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ভারতের আসামেই রয়েছে ৬টি ব’ন্দিশিবির। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ঘিরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেককে ব’ন্দি রাখা হয় ওই সব শিবিরে।
সূত্র: আনন্দবাজার