খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
টাকার চেয়ে দ্রুত এবং ঘন ঘন হাতবদল হয়, এমন বস্তু বিশ্বে দ্বিতীয়টা নাই। ময়লা আর্বজনায় পড়ে যাওয়া টাকাও ফেলনা নয়, সেটা আবার ফিরে আসছে হাতে হাতে। কিছু টাকায় এতো বেশি ময়লা থাকে, যা হাতে ধরতেও সংকোচ কাজ করে। এসব টাকায় রয়েছে ‘ই-কোলাই’ ও ‘ফেকাল কলিফর্ম’ জাতীয় ব্যাকটেরিয়া, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁ’কিপূর্ণ। এসব ব্যাকটেরিয়া মলে পাওয়া যায়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী নিশাত তাসনিমের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘স্টাডি অন দ্যা ব্যাকটেরিয়াল কন্টামিনেশন অন পেপার মানি অ্যান্ড কয়েনস অব খুলনা সিটি এরিয়া’।
৬ মাস ধরে নগরীর ১৫টি উৎস থেকে টাকা ও কয়েন সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। গবেষণায় মাংস, মাছ ও মুরগি বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ও মলের জীবাণু পাওয়া যায়। অন্য ১২টি উৎস থেকে নেওয়া টাকার নোট এবং কয়েনেও ক্ষ’তিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের গবেষণা সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, টাকা ছাড়া প্রাত্যহিক জীবন অচল। অথচ সেই টাকাই আমাদের জন্য মা’রাত্মক ক্ষ’তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। টাকা ধরে হাত না ধুয়ে খাবার খেয়ে অনেক মানুষ ক্ষ’তিগ্রস্ত হচ্ছেন।
শিগগিরই এ বিষয়ে আরও বড় পরিসরে ১ বছর ধরে আরেকটি গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই গবেষণার ব্যাপারে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এসএম কামাল বলেন, টাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু থাকে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় টাকা মাটিতে, ময়লার মধ্যে কিংবা ড্রেনে পড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেই টাকা শুকিয়ে আবার তা ব্যবহার করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় টাকার নোট ও কয়েনে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, তা মলের মধ্যে থাকে। টাকায় যে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তা পেটে গেলে বিভিন্ন রোগে আক্রা’ন্ত হওয়ার আশ’ঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রস্রাবের ইনফেকশনও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসের দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোটে সর্বাধিক ২ হাজার ৬৭০টি, মাছ বিক্রেতার টাকায় ২ হাজার ৬০০টি ও মুরগি বিক্রেতার টাকায় ২ হাজার ৩০০টি ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।
এছাড়াও মাছ ও মুরগি বিক্রেতার টাকায় ২ হাজার ৮০০টি ও মাংসের দোকানের টাকায় ২ হাজার ৬০০ ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা টাকায়ও এ দুটি ব্যাকটেরিয়া মিলেছে, তবে সেগুলো ১ হাজার এর নিচে রয়েছে।
এছাড়া মাছ বিক্রেতার দোকান থেকে সংগ্রহ করা কয়েনে ২ হাজার ৬০০টি ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া, মুরগির দোকানের কয়েনে ২ হাজার ৪৮০টি, জ্যুস বিক্রেতার কয়েনে ২ হাজার ৬০০টি, মাংসের দোকানের কয়েনে ২ হাজার ১৩০টি, পথ খাবারের দোকানের কয়েনে ১ হাজার ৭৯০টি ও ফুচকার দোকানের কয়েনে ১ হাজার ২৫০টি ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
মুরগির দোকানের কয়েনে ২ হাজার ৯০০টি, মাছ বিক্রেতার কয়েনে ২ হাজার ৮০০টি, মাংস বিক্রেতার কয়েনে ২ হাজার ৬৬০টি, ফল বিক্রেতার কয়েনে ২ হাজার ৬০টি, পথ খাবারের দোকানের কয়েনে ১ হাজার ৫৭০টি, ফুচকা বিক্রেতার কয়েনে ১ হাজার ৪৬০টি, সাধারণ মানুষের কয়েনে ১ হাজার ২০০টি, ভিক্ষুকের কয়েনে ১ হাজার ৮০টি ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা কয়েনেও এ দুটি ব্যাকটেরিয়া মিলেছে, তবে সেগুলো ১ হাজার এর নিচে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থ প্রতীম দেবনাথ জানান, ১ হাজারের বেশি পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁ’কিপূর্ণ।
745