স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এখন কেউ গলায় একটু অ’স্বস্তি অনুভব করলে অথবা কাশি হলে করোনা ভাইরাসের সংক্র’মণ সন্দেহে আত’ঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
অবশ্যই করোনা ভাইরাস গুরুত্ব দেয়ার মতো একটি বিষয়, কারণ সংক্র’মিত লোকের সংস্পর্শ আসলে অথবা অথবা অন্যান্য উপায়ে যে কোনো বয়সের মানুষ এতে আক্রা’ন্ত হতে পারেন। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে এমন মানুষ এই ভাইরাসে তা খারাপ পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে।
আত’ঙ্কিত হওয়ার বিষয় নয়?
উপসর্গ দেখলেই ভাইরাসটিতে আক্রা’ন্ত হয়েছেন বলে আত’ঙ্কিত হবেন না। করোনা ভাইরাস সংক্র’মণে যেসব উপসর্গ প্রকাশ পায় তার বেশিরভাগই শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগের উপসর্গও। করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের উপসর্গ এবং ফ্লু, ঠান্ডা ও অ্যালার্জির উপসর্গের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখেই আত’ঙ্কিত হবেন না, আগে এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে আপনার আসলে কী হয়েছে। ফ্লু, অ্যালার্জি নাকি নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্র’মণ?
এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
মায়ো ক্লিনিকের ভ্যাক্সিন রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ডা. গ্রেগ পোলান্ড সিএনএনকে সাধারণ অ্যালার্জি, ঠান্ডা ও ফ্লুর উপসর্গ এবং নতুন করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের উপসর্গের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে বলেছেন। তাই উপসর্গ দেখা গেলে প্রকৃত সমস্যা শনাক্ত করতে তার কথাগুলো বিবেচনা করতে পারেন।
চোখে চুলকানি ও সর্দি? সম্ভবত অ্যালার্জি অথবা সাধারণ ঠান্ডা
ডা. পোলান্ড বলেন, মৌসুমী অ্যালার্জির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি নাক ও চোখকে আক্রা’ন্ত করে। উপসর্গগুলো সাধারণ নাক, চোখ অথবা মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক হয়ে থাকে এবং র্যাশ ওঠে। চোখ চুলকালে ও নাক থেকে পানি পড়লে এ সমস্যাটি মৌসুমী অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভানা বেশি। নতুন করোনা ভাইরাস ও ফ্লুর উপসর্গ বেশি সিস্টেমিক হতে পারে। এর মানে হলো, তারা পুরো শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডা. পোলান্ড বলেন, ফ্লু ও নতুন করোনা ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের নিম্নভাগে ও অন্যান্য সিস্টেমে প্রভাব ফেলে। এসবে আক্রা’ন্ত ব্যক্তির সর্দি নাও হতে পারে, কিন্তু গলাব্যথা, কাশি, জ্বর ও শ্বাসক’ষ্ট হতে পারে। তাই এটা বলা যায় যে, ফ্লু ও নতুন করোনা ভাইরাসের পার্থক্য নিরূপণের জন্য সুনির্দিষ্ট উপসর্গ নেই। কিন্তু যেসব উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা অ্যালার্জি কি না সহজে নিরূপণ করা যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখুন। অ্যালার্জি থেকে জ্বরের সম্ভাবনা খুবই কম। অ্যালার্জিতে সাধারণত শ্বাসক’ষ্টও হয় না, কিন্তু হাঁপানি থাকলে ভিন্ন কথা। অ্যালার্জির উপসর্গগুলো নিয়মিত দেখা দেয় ও হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার হয়ে থাকে।
ডা. পোলান্ড বলেন, বছরের পর বছর একই সময়ে একই উপসর্গ দেখা দিলে করোনা ভাইরাসের সংক্র’মণ মনে করে আত’ঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। এটি মৌসুমী অ্যালার্জি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এ সমস্যাতে ওভার-দ্য-কাউন্টার ও’ষুধ ও অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি ভালো অনুভবে সাহায্য করবে। ফ্লু ও করোনা ভাইরাস সংক্র’মণে খুব ক্লান্তি অনুভব হয়, অন্যদিকে অ্যালার্জির ক্লান্তি হালকা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে ডা. পোলান্ড বলেন, ফ্লু ও করোনা ভাইরাস সংক্র’মণে একজন রোগীর এত বেশি ক্লান্তি ও চাপা ব্যথা অনুভূত হয় যে, তিনি সাধারণত বিছানায় যেতে বাধ্য হন। কিন্তু অ্যালার্জিতে ক্লান্তি ও পেশি ব্যথা অথবা জয়েন্ট ব্যথার মাত্রা এত বেশি হয় না। অর্থাৎ ফ্লু ও করোনা ভাইরাস সংক্র’মণে রোগীরা বিশ্রামে থাকার তাড়না অনুভব করলেও অ্যালার্জিতে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে তেমন সমস্যা হয় না। ঠান্ডা ও হালকা ফ্লুর উপসর্গ সাধারণত নিজে নিজে সেরে ওঠে।
হালকা ফ্লু ও ঠান্ডার মতো সাধারণ অসুস্থতায় বিশ্রাম নিলে ও সঠিক সেবাযত্নের ওপর থাকলে কিছুদিনের মধ্যে ভালো অনুভব হয়। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দিনকে দিন আরো খারাপের দিকে যেতে পারে, এ অবস্থায় মেডিক্যাল সেবা নিতে হবে। তীব্র ফ্লুর কেসেও একথা প্রযোজ্য। ডা. পোলান্ড বলেন, শ্বাসক’ষ্টে করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের সন্দেহ আরো শক্তিশালী হয়। করোনা ভাইরাস সংক্র’মণ ও তীব্র ফ্লু উভয়ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া ডেভেলপ হতে পারে। তাই যে কারণেই উপসর্গ প্রকাশ পাক না কেন, অবস্থা আরো খারাপের দিকে এগুতে থাকলে মেডিক্যাল সেবা নেয়ার প্রয়োজন হবে।
অ্যালার্জি, ঠান্ডা, ফ্লু ও করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের প্রাথমিক উপসর্গ একই ধরনের হতে পারে। ডা. পোলান্ড জানান, ঠান্ডা, ফ্লু ও করোনা ভাইরাস সংক্র’মণের প্রারম্ভিক পর্যায়ে উপসর্গগুলো একইরকম হতে পারে। কিছু করোনা ভাইরাস সংক্র’মণ ও ফ্লুর কেস এতটা হালকা প্রকৃতির যে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ প্রকাশ পায় না। কিন্তু উপসর্গ প্রকাশ পেলে ও লেগে থাকলে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁ’কিপূর্ণ দলের অন্তর্ভুক্ত হলে।
ডা. পোলান্ড জানান, বয়স্ক মানুষ, হাঁপানি ও ফুসফুস সমস্যার রোগী, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্র’মণ বিপ’জ্জনক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।