বিশেষ প্রতিবেদন:
করোনা সং’কটের প্রায় অর্ধশত দিন হয়ে গেছে বাংলাদেশে। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রা’ন্ত রোগী শনাক্ত হবার পর থেকে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি, মৃ’ত্যু দুইশর নিচে এবং যে সামাজিক সংক্র’মণ, তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই শেষ নয়। কারণ বিশ্বের যে সমস্ত দেশে করোনা প্রভাব বিস্তার করেছে, যে দেশগুলোকে করোনা তছনছ করেছে- সেই সমস্ত দেশগুলোতে প্রায় ৬০ দিন পর্যন্ত আক্রা’ন্ত রোগীর সংখ্যায় উলম্ফন থাকে এবং করোনার ব্যাপক বিস্তৃতির শ’ঙ্কা থেকে যায়। সেই তুলনায় বাংলাদেশের জন্য সামনের ১৫ দিন অত্যন্ত শ’ঙ্কার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনার পরিস্থিতি কি হবে, আদৌ এটা ভ’য়াবহ হবে নাকি আমরা ভ’য়াবহ তা’ণ্ডব থেকে বাঁচবো, তা বোঝার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে নেই। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের একটু বেশি সংখ্যক টেস্ট করা হয়েছে। দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার তুলনায় এটা অত্যন্ত অ’প্রতুল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এই ৪০ হাজার পরীক্ষার ফলাফল থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। তাই পরীক্ষা যত বাড়বে, তত বাংলাদেশের অবস্থা, করোনা সং’কট কোন পর্যায়ে রয়েছে- তা বোঝা যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্র’মণের হার এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১১ ভাগের মধ্যে সীমিত রয়েছে। কারণ প্রথম দিকে যখন সীমিত পরীক্ষা করা হতো তখন যে আক্রা’ন্তের হার, আর এখন পরীক্ষার হার অনেক বাড়ানো হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তাতেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ১১ ভাগের বেশি সংক্র’মণ নেই- যা একটি আশার ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে কিছু উন্নত দেশের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা এবং উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালি, স্পেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০তম দিনের পর বা ৬০তম দিনের দিকে এটা ভ’য়াবহ রূপ ধারণ করেছে এবং বাংলাদেশেও এরকম পরিস্থিতি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে এখনো শ’ঙ্কার মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলছে, লকডাউন শিথিল করলে ভ’য়াবহ পরিস্থিতি হবে। বাংলাদেশ যে ২৫ এপ্রিল থেকে সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করেছে- এটাকে অনেকে মনে করছেন শিথিল ছুটি। এই ছুটির মাধ্যমে করোনাকে পরোক্ষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে সবথেকে ঝুঁ’কিপূর্ণ স্থানের মাঝে একটি হচ্ছে গাজীপুর, অন্যটি নারায়ণগঞ্জ। এই দুটি শিল্প ঘন এলাকায় প্রচুর রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। চট্টগ্রামসহ দেশের নানা এলাকার শিল্প কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে, ফলে একটি বিশাল সামাজিক সংক্র’মণের ঝুঁ’কিতে পড়ল গোটা দেশ।
এছাড়া কিছু কিছু অফিস খোলা, আদালত খোলার ফলে রাস্তাঘাটে মানুষের যাতায়াত বাড়বে- এর ফলে আগামী ১৫ দিন বাংলাদেশে সামাজিক সংক্র’মণের একটি বড় ঝুঁ’কি তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বাংলাদেশে করোনা আছে এবং এখন পর্যন্ত করোনার যে নিম্নমুখী প্রবণতা তা দৃশ্যমান নয়। তাই এখন লকডাউন শিথিল করা হলো, যার ফলে আগামী ১৫ দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।
তবে ২৬ মার্চ থেকে যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই ছুটিতে দেশে বেশকিছু অ’ঘটন ঘটেছে। এই অ’ঘটনের কারণে যেভাবে শ’ঙ্কা করা হয়েছিল, এসব ভুলের কারণে করোনা সংক্র’মণ ব্যাপক বিস্তৃত হবে, তা হয়নি। কয়েকটি আত্মঘা’তী অ’ঘটনের ভেতরে রয়েছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ভেঙে ঢাকামুখী যাত্রা, ত্রাণের জন্য মানুষের গাদাগাদি করে লাইনে থাকা, জানাজায় হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হওয়া ইত্যাদি। এরপরেও দেশে যে সামাজিক সংক্র’মণ, সেটা এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এখনো বাংলাদেশ করোনা সংক্র’মণের আসল রূপ দেখেনি বলে মনে করছেন কিছু বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করছেন, আমাদের যে পরীক্ষা হচ্ছে, তাতে দুটি ত্রু’টি রয়েছে। প্রথমত এই পরীক্ষা কিছু কিছু একাকাভিত্তিক করা হচ্ছে। শুধুমাত্র সন্দেহজনক জনগোষ্ঠীর উপরেই পরীক্ষা হচ্ছে। তবে উপসর্গ ছাড়াই অনেক করোনা আক্রা’ন্ত ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে, যারা সামাজিক সংক্র’মণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ঝুঁ’কি গ্রহণ করছেন।
তাছাড়া পরীক্ষা কিটের স্বল্পতার কথা শোনা যাচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কীট আছে তা আরো ১৭ থেকে ১৮ দিন চলতে পারে। তবে পরীক্ষার যদি হার বাড়ানো হয় এবং রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তাহলে কিটের অভাব একটি বড় সং’কট তৈরি করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী ১ সপ্তাহ যদি পরীক্ষার হার এমনই থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ এখনো সংক্র’মণের ঝুঁ’কিতে রয়েছে এবং যে কোন সময়ে এটা উলম্ফন দিতে পারে।
এজন্য আগামী ১৫ দিন শিথিল ছুটি সত্ত্বেও আমাদের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা।