দুই দশক পর তুরাগে ফিরেছে শুশুক!

0

ফিচার ডেস্ক:

শুশুক ফিরেছে রাজধানীর তুরাগ নদে। প্রায় ২০ বছর পর এ নদে ইদানীং শুশুকের দেখা মিলতে শুরু করেছে। ফলে এ নদে দিনের অনেক সময় এখন মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে জলজপ্রাণী শুশুকের ডিগবাজি। কয়েকদিন আগে জেলেদের জালে আটকে পড়ে বিরল প্রজাতির একটি শুশুক। পরে ছেড়ে দেওয়া হয় নদে।

এখন নদের দুই তীরে সকালে-বিকালে অনেকে ভিড় করছেন শুশুকের ডিগবাজি দেখতে। নদীমাতৃক এ দেশে ২ দশক আগেও নদীর বুক চিরে ‘ভুস’ করে শুকর ছানার মতো একটা কিছু ভেসে উঠতে দেখা যেত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দখ’ল ও দূষণে নদের প্রকৃত চরিত্র হারাতে থাকে তুরাগ। অনেকে শৈশবে নদের তীরে বসে ভুস করে ভেসে ওঠা প্রাণীটির মাথা গুণতেন।

এ প্রাণীর স্থানীয় পরিচয় ‘হুম মাছ’। আসল নাম শুশুক। প্রাণীটি গত প্রায় ২০ বছরে আর তুরাগে দেখা যায়নি। গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে চলছে অবরোধ। বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত, কল-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে নদে পড়ছে না বিষাক্ত পদার্থ। প্রকৃতির এমন পরিবর্তন এবং সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ায় তুরাগ নদে ফিরতে শুরু করেছে শুশুক।

জানা যায়, উইপোকার মতো বিস্ময়কর প্রাণী শুশুক। এরা স্তন্যপায়ী, মূক-বাকহীন ও জন্মান্ধ। উইপোকা জন্মান্ধ হয়েও মাটির তলায় অন্ধকার জগতে চক্ষুষ্মানের চেয়েও বিস্ময়কর কাজ করতে পারে- তেমনি গভীর জলের তলায় বিস্ময়কর কাজ করতে পারে শুশুকও। ডলফিন বাস করে লোনা পানিতে। আর শুশুক মিঠা পানির প্রাণী। শুশুকের ফুলকা নেই। ফলে অক্সিজেন গ্রহণের জন্য মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে। জলীয় বাষ্প ছেড়ে অক্সিজেন নিয়ে আবার তলিয়ে যায়। পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও সাঙ্গুই ছিল এদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। এসব নদীতে এক সময় কুমিরও বাস করত।

শুশুক চক্ষুষ্মান না হওয়ায় আলট্রাসনিক বা হাইপারসনিক শব্দ করে থাকে। সেই শব্দ তরঙ্গের প্রতিধ্বনি শুনে বাদুড়ের মতো পদ্ধতিতে চলাফেরা ও শি’কারের কাজ করে। বৈজ্ঞানিকদের ধারণা, পানিতে কটকট জাতীয় শব্দ করে ওই পানির মধ্যেই এক ধরনের কম্পন সৃষ্টি করে। এরা শি’কারের কৌশল হিসেবে এক জোড়া ফিন থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরণ করে। তেলের গন্ধে অন্যান্য মাছ আকৃষ্ট হয়ে কাছে আসে।

কখনো একা কখনো দলবেঁধে চলাচল করে এ প্রাণী। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিশু থাকে মা শুশুকের সঙ্গে। জন্মের সময় শিশু শুশুকের গায়ের রঙ চকলেটের মতো গাঢ় বাদামি রঙের হয়। স্ত্রী শুশুক পুরুষ শুশুকের চেয়ে আকারে বড়। ১০-১১ মাস গর্ভধারণ শেষে মা শুশুক একটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা অবস্থায় শিশু শুশুক মায়ের সামনে, পিঠের ওপর কিংবা পেটের নিচে অবস্থানসহ সঙ্গে সঙ্গে থাকে। নিজে’রা শি’কার ধরার উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। এরা ২৬-২৮ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

শুশুক যখন মাছ ধাওয়া করে তখন প্রাণ বাঁচাতে মাছ কখনো কখনো লাফ দিয়ে পানির ওপরে চলে আসে- মাছের সঙ্গে শুশুকও উঠে আসে পানির ওপরে। এরা গভীর পানির বাসিন্দা হলেও বর্ষায় শাখা নদী বেয়ে উজানে চলে আসে। এমনকি শি’কার তাড়া করতে করতে কখনো ঢুকে পড়ে বন্যাকবলিত ফসলের জমিতে।

শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে ফিরে আসে নিজস্ব আবাসে। বেশ কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গায়ও শুশুক দেখা গেছে। এ প্রাণী পানির ওপরে বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। নদীর দূষিত পানিতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। শুশুকের বড় শত্রু মানুষ ও মনুষ্য সৃষ্ট প্রতিব’ন্ধকতা।

প্রকৃতির অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রাণিটি যেন তুরাগ থেকে আবার ফিরে না যায়, সেজন্য সচেতন মহল জোর দাবি জানাচ্ছেন সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি। যেন পরিবেশ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়।

প্রতিবেদক: মোস্তফা কাজল

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!