সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার রিয়াজুল ইসলাম রাজু। নতুন কোন কিছু উদ্ভাবন করাই যেনো তার নেশা। সম্প্রতি তিনি দেশীয় প্রযুক্তিতে ইতালির বিখ্যাত বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কার ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি প্রাইভেটকার তৈরি করে সকলের নজর কেড়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই নতুন কোন কিছু উদ্ভাবন করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দিতেন রিয়াজুল। এখান থেকে ১৫ বছর আগে স্কুল পড়াকালে বাইসাইকেলে মোটর লাগিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কলেজ জীবনে ৩ ইঞ্চি শ্যালোমেশিন দিয়ে ডিজেল চালিত মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেন। এরপর ২০১৯ সালে তার মাথায় আসে প্রাইভেটকার তৈরির বিষয়টি। মোটরসাইকেলের পুরাতন ইঞ্জিন, ইজিবাইকের চাকা ও প্রাইভেটকারের সিট ও স্টিয়ারিং দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেন ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি প্রাইভেটকার। বর্তমানে শুধুমাত্র কাঠামো তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছেন তিনি।
সাতক্ষীরার এই তরুণ উদ্ভাবক বলেন, ২০১৯ সালে প্রাইভেটকার তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। কিছুদিন পরেই কাজে নেমে পড়ি। মোটরসাইকেলে পুরাতন ইঞ্জিন, ইজিবাইকের চাকা ও প্রাইভেটকারের সিট ও স্টিয়ারিং দিয়ে এক ভাইয়ের ওয়ার্কশপে তৈরি করেছি ইত্যালির বিখ্যাত কার ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি প্রাইভেটকার। এখনও পুরোটা তৈরী করা শেষ হয়নি। বনবিভাগে চাকরি করি। অফিসের বাইরে সময় পেলে তখন এটা নিয়ে কাজ করি। খুব দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলবো। আমার প্রাইভেটকার অনেকে দেখতে আসে। এটার কাজ এখনও শেষ করতে পারিনি কিন্তু ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন এ ধরনের প্রাইভেটকার তৈরি করে নিতে চেয়েছেন।
ছবি: ল্যাম্বরগিনি গাড়ির একটি এক্সক্লুসিভ মডেল। সাধারণ মডেলের একেকটি ল্যাম্বরগিনি গাড়ির মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৯-১০ কোটি টাকা (শুল্ক ও আনুষাঙ্গিক কর বাদে)।
তিনি আরও বলেন, হাইস্কুল জীবনে ইঞ্জিনচালিত সাইকেল তৈরি করেছিলাম। কলেজ জীবনে শ্যালোমেশিন দিয়ে বিশালআকৃতির মোটরসাইকেল তৈরি করি। সেটা চলতো ডিজেলে। দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি কাঠমো করেছি। এটা সম্পূর্ণ দেশিয় প্রযুক্তিতে।
তিনি বলেন, আমার বাবা মুক্তিযু’দ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমিও দেশের জন্য কিছু করতে চাই। অনেকের প্রাইভেটকার চড়ার শখ থাকলেও তারা টাকার অভাবে কিনতে পারে না। তার যেন অল্প টাকায় সেই প্রাইভেট কেনার শখ পূরণ করতে পারে সেজন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটি খুবই সাশ্রয়ী। একটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি করেছি। এর সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ৭০ কিলোমিটার। ১ লিটার জ্বালানিতে এটি ৩৭ কিলোমিটার যায়। ৪ চাকায় ব্রেক আছে। জিআই বক্স দিয়ে ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে। বডির কাজ এখনও হয়নি। অফিসের ফাঁকে অল্প সময় কাজে লাগান তিনি। এতে ৪ জন বহন করতে পারবে।
তিনি বলেন, সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে দেশেই গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করাও সম্ভব। এখন সাইকেল ও ভ্যানে পর্যন্ত ইঞ্জিন লাগানো হচ্ছে। এটি খুব সহজেই যে কেউ চালাতে পারবে। প্রতিটি মানুষ যেন প্রাইভেটকার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার কাজ আরও সহজ, দ্রুত ও সুন্দর হবে বলেও জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, তরুণ উদ্ভাবককে তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করা কার নিয়ে উপজেলা চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি।