বিশেষ প্রতিবেদন:
করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসা নয়, বরং স্যুইসাইডের পথ বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার পিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার এবং মানুষ যে সমস্ত কর্মকাণ্ড করছে, তাতেই এটা স্পষ্ট, এটি করোনা থেকে মুক্তির পথ নয়। কারণ জনগণ এবং সরকার যদি করোনা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতো, তাহলে কঠোর লকডাউন করা দরকার ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে এখন ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। লোকজন অ’বাধে চলাফেরা করছে। দোকানপাটে উপচেপড়া ভিড়। মানুষ কেনাকাটা এবং ঈদের ছুটিতে ঘরে ফিরতে ব্যস্ত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির ভ’য়ঙ্কর পথে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর কারণ হলো ৫টি। এগুলো হলো-
১. মানুষ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না
করোনা সং’কটের সময় অধিকাংশ মানুষই কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তারা অ’বাধে চলাফেরা করছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও দোকানপাটগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মানুষ কেনাকাটা করছে। এমনভাবে চলাফেরা করছে যেন, করোনাকে কিসের ভ’য়! ফলে ব্যাপকভাবে করোনা সং’ক্রমিত হচ্ছে। বিশেষ করে, যখন সর্বোচ্চ সীমায় করোনা পৌঁছেছে এবং যখন দেশে করোনার সং’ক্রমণ বেড়ে চলেছে, তখন এমন আচরণকে স্যুইসাইডাল বলেই মন করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২. ঢাকার সং’ক্রমিতরা ছড়িয়ে পড়ছেন সারাদেশে
ঢাকার মানুষ ঈদ করতে ঘরে ছুটছে এবং তারা কোনো বিধি নিষে’ধ এমনকি যান বাহনেরও প্রত্যাশা করছে না। গণপরিবহন বন্ধ কিন্তু যে যেভাবে পারছেন, ঢাকার বাইরে ছুটে যাচ্ছেন। পায়ে হেঁটে, লঞ্চে, ফেরিতে কিংবা ভাড়া করা গাড়িতে ছুটছেন তারা। আমরা জানি, ঢাকা হলো সবচেয়ে সং’ক্রমিত এলাকা। বাংলাদেশে করোনা হটস্পট হলো ঢাকা শহর। অথচ এই ঢাকা শহর থেকেই যে মানুষগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছেন, তারা কি একবার ভেবেছেন, তারা সং’ক্রমিত কিনা। তারা যদি করোনা সংক্রমিত হন, তাহলে ছোট ছোট গ্রাম বা অঞ্চলে তারা যে করোনা ছড়িয়ে দেবেন, তখন পরিস্থিতি কি ভ’য়ংকর হতে পারে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা রয়েছে?
৩. চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
বাংলাদেশে করোনার শুরুর দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসা ছিল না বললেই চলে। সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। এখন অনেকগুলো বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং বলা হচ্ছে যে আউটডোরে পরীক্ষা করতে দেয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সারাবিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা চিকিৎসা এবং সাধারণ চিকিৎসাকে পৃথক করতে। কিন্তু করোনা পরীক্ষা এবং অন্যান্য চিকিৎসা একসাথে চলার যে সিদ্ধান্ত, সেই সিদ্ধান্তটি আত্মঘা’তী। এর ফলে হাসপাতালে যারা জরুরী চিকিৎসাসেবা নেন, যেমন হৃদরোগী, কিডনী রোগী, ডায়ালাইসিসের রোগী- তারা সং’কটে পড়বেন এবং হঠাৎ করেই মৃ’ত্যুর সংখ্যাও বাড়বে।
৪. পরীক্ষা এখনো সীমিত
করোনা সং’ক্রমণের ৭৫ তম দিন আজ বাংলাদেশে। এই ৭৫ তম দিনের মধ্যে মাত্র একদিন ১০ হাজারের উপরে পরীক্ষা করা হয়েছিল, সেটা গতকাল। আজ আবার পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। ৯ হাজার ৭২৭ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা ল্যাব বাড়িয়েছি অনেক, ৪২টি থেকে ৪৭টি ল্যাব বানানো হয়েছে। কিন্তু ল্যাব বাড়লে কি হবে? পরীক্ষার সংখ্যা ১০ হাজার অতিক্রম করছে না। ফলে একটি বিপুল জনগোষ্ঠী পরীক্ষার বাইরে থাকছে এবং পরীক্ষার বাইরে থাকার কারণে তারা অ’বাধে চলাফেরা করছেন এবং করোনা সং’ক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
৫. হাসপাতাল ছাড়া রোগীর সংখ্যা
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনার চিকিৎসা নিয়ে ৫ হাজার ৬০২ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন। অথচ তাদের অনেকেরই করোনা মুক্তির ক্ষেত্রে পরপর ২৪ ঘণ্টায় যে দুটি পরীক্ষা হয়, সে পরীক্ষা দুটি হয়নি। ফলে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের সুস্থ মনে করছেন এবং তারাও করোনা সং’ক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশ এখন একটি ভ’য়ঙ্কর অবস্থার দ্বারপ্রান্তে এবং আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা করোনাকে আলিঙ্গন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
করোনা মোকাবেলা নয়, করোনাকে আলিঙ্গন করে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আর যে কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪ জন মা’রা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মৃ’ত্যুর সংখ্যা হঠাৎ অনেক বেড়ে যাবে এবং এটা আমাদের কারোরই নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
বাংলাইনসাইডার