বিশেষ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে করোনা সং’ক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। গড়ে প্রতিদিন এখন ১০ হাজারের কাছাকাছি পরীক্ষা হচ্ছে। ১০ হাজারের পরীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতি ১০০ জনে ১৭ জনের বেশী মানুষ করোনায় সং’ক্রমিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।
তবে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা যা আন্দাজ করেছিলেন, বাংলাদেশে মে’র শেষ পর্যন্ত করোনার পিক সিজন থাকবে এবং জুন থেকে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে, সেটি এখন আর বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা বরং মনে করছেন, পুরো জুন মাসজুড়েই বাংলাদেশে করোনা সং’ক্রমণ বাড়তে পারে। জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করবে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করছেন যে, বাংলাদেশে কম মৃ’ত্যুর হার নিয়ে যে আত্মতুষ্টি, তা-ও কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশে খুব শিগগিরই মৃ’ত্যুর হারও বাড়বে।
একাধিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশের যেভাবে করোনা মোকাবেলা করার দরকার ছিল, সেভাবে করতে পারেনি। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে ভ’য়ঙ্কর পরিস্থিতি শুধু ভ’য়ঙ্কর হয়ে উঠছে না, অনেক দীর্ঘমেয়াদীও হচ্ছে।
এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮ জন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্ষেপণ করেন। তারা বলেছিলেন, বাংলাদেশে মে মাসের শেষ পর্যন্ত পিকে থাকবে করোনা। তারপর আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। জুন মাসের ৩য় সপ্তাহ নাগাদ আমাদের করোনা পরিস্থিতি একটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তারা এটা বলেছিলেন।
তারা এটাও প্রক্ষেপণ করেছিলেন, ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ করোনা রোগী সর্বোচ্চ আমাদের হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশে একটা প্রথম তরঙ্গ শেষ হলো। আবার নতুন করে করোনার তরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে। সেটিও পিক সিজনে যাবে। এর পেছনে মূল কারণ বলে তারা মনে করছেন, বাংলাদেশে করোনা সং’ক্রমণের টার্নিং পয়েন্টকে তারা ৩ ভাগে ভাগ করছেন।
প্রথমত; যারা ইতালি থেকে ফেরত আসলেন, তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখা হলো না। এর মাধ্যমে করোনা সং’ক্রমিত হলো।
দ্বিতীয়ত; করোনার সামাজিক সং’ক্রমণ ঘটা জায়গাগুলোকে আমরা বিচ্ছি’ন্ন করতে পারিনি। ফলে ওই এলাকার লোকজন বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক সং’ক্রমণ ছড়িয়ে দেয়।
তৃতীয়ত; ঢাকায় সামাজিক বিচ্ছি’ন্নতা ও কঠোর লকডাউন দরকার ছিল যখন, সেই সময় আমরা দোকান, হাট-বাজার ও গার্মেন্টস খুলে দিয়েছি। ফলে আমাদের পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে।
এছাড়াও পরিস্থিতির নতুন নে’তিবাচক মাত্রা হলো- এই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ঈদে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। এই মানুষগুলো ঈদের পরে আবার গ্রাম থেকে শহরে আসবেন। এর ফলে একটি লাগামহীন পরিস্থিতি তৈরী হবে বলে চিকিৎসকরা আশ’ঙ্কা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ঢাকা থেকে যারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই করোনা সং’ক্রমণ নিয়ে যাবেন এবং আমাদের যেটা ইতিবাচক দিক ছিল, ঢাকার বাইরে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলগুলোতে করোনা রোগী কম ছিল। কিন্তু এখন ঢাকার লোকজনের গ্রামে যাওয়ার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও করোনা ছড়িয়ে পড়বে। আর এমনটা হলে সারাদেশেই একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
শুধু ডা. এবিএম আব্দুল্লাহই নন, অনেক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞই বলছেন, বাংলাদেশে করোনার ২য় পর্যায় শুরু হবে ঈদের পর থেকে। ঢাকা থেকে মানুষ যখন সারা দেশে যাবে, সেখানে তারা করোনার সং’ক্রমণ ছড়িয়ে দেবে। এর ৩য় ধাপ হবে যখন তারা ঢাকায় ফিরবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশই করোনার হটস্পটে পরিণত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে জুন থেকে আমাদের করোনার নতুন অধ্যায়, নতুন সং’ক্রমণের পর্যায় শুরু হবে। যা জুনের ৩য় সপ্তাহে গিয়ে আবার পিকে উঠবে। এর মধ্যে যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো না মানতে পারি, তাহলে জুলাইয়েও আমাদের করোনা থাকবে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনার সঙ্গে বসবাসের এবং এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো মৃ’ত্যুর হার কম থাকা। কিন্তু যখন করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে, তখন মৃ’ত্যুর হার অবধারিতভাবেই বাড়তে বাধ্য। তখন আমরা এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেব, সেটাই ভাবনার এবং উদ্বেগের।
চিকিৎসকরা মনে করছেন যে, তখনই আসলে বাংলাদেশে করোনার ভ’য়াবহতা সাধারণ চোখে ধরা পড়বে। তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ থাকবে খুবই কম।
২ Comments
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সামান্যতম সচেতনতা নেই। সরকার খুবই চেষ্টা করলো কিন্তু হচ্ছেনা। মানুষের শিক্ষা পাওয়াই উচিত।
Bisheshoggora akhon jeta bolche eta na mille to arekta bolbe, problem nai,