কুমিল্লা প্রতিনিধি:
এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এক হাজার ৭৩২টির মধ্যে এবার ১৬১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। তার মধ্যে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার চা বিক্রেতা আবদুল খালেকের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ নিয়ে এলাকায় খুশির আমেজ বাইছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রামের রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকান দেন নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের মাক্কু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আবদুল খালেক। কিছু টাকা জমিয়ে দোকানের নিকট ৫৪ শতক জমি কিনেন। সেই জমিতে ১৯৯৭ সালে নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষায় ৪৬ জন অংশ গ্রহণ করে সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। সামনে আরও ভালো ফলাফলের আশা করছি।
মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেন, এই গ্রামের ৮০ ভাগ লোক ছিল নিরক্ষর। কিছু ছেলে-মেয়ে প্রাইমারিতে পড়লেও দূরে হওয়ায় হাইস্কুলে যাচ্ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃসন্তান। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছেন। স্কুলের জন্য জমি দেওয়ায় প্রথম দিকে গ্রামের ও পরিবারের লোকজন তাকে পাগল বলতো। যেদিন তার স্ত্রী স্কুল দেখে বললেন- একটি ভালো কাজ করেছেন সেদিন অনেক আনন্দ পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার জন্য একটি ফুল বাগান করে দিয়েছি। এখন শিক্ষক ও এলাকাবাসী তার পরিচর্যা করবে। তিনি স্কুলটি সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন।
এখানে একদিন একটি কলেজও প্রতিষ্ঠিত হবে বলে স্বপ্ন দেখেন মোহাম্মদ আবদুল খালেক।
আইনজীবী হতে চায় গৃহকর্মী মিনারা
দারিদ্রের কারণে দমে যায়নি মিনারা খাতুন। অন্যের বাড়িতে কাজ করেও এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হরিদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। মিনারা খাতুন আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে একজন আইনজীবী হতে চায়।
মিনারার গৃহকর্তা ব্যারিস্টার নুরুজ্জামান জানান, ৪ বোন ও ১ ভাইকে নিয়ে মিনারার পরিবার। তার মা থাকলেও বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে। মিনারার পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।
মিনারার উচ্চ শিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যা যা করার সব সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন নুরুজ্জামান।
228