নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো করোনা ভাইরাস। শুরুর দিকে অনেকে রটিয়েছিল করোনায় কারো মৃ’ত্যু হলে তাদেরকে গোসল কাফন দাফন জানাযা দিতে লোক পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় এসবের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসার ঘোষণা দেয় নারায়ণগঞ্জের তরুণ আলেম সমাজ।
সেই লক্ষ্যে একটি কমিটিও হয়েছে বলে জানান তরুণ আলেম সমাজের নেতৃত্ব দানকারী উলামা পরিষদ নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। তবে সেই ঘোষণা ছিল লোক দেখানো। ইতোমধ্যেই শহরের একাধিক মৃ’ত ব্যক্তির পরিবার খুঁজেও তাদের পাননি। ফোন করার পর তাদের কোনো সাড়া না পেয়ে দাফন শেষ হয়ে যায়। তারপর ৭/৮ ঘণ্টা পর তারা কল ব্যাক করে জিজ্ঞাসা করেন কী হয়েছে। এ ধরনের কর্মকান্ডের ঘোষণা ভ’ন্ডামি ও মিডিয়া কাভারেজ পেতে করা হয়েছে।
জানা যায়, ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে করোনার লক্ষণ নিয়ে মানুষ মা’রা যাচ্ছেন। তাদেরকে প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিম দাফনের ব্যবস্থা করছে।
এর আগে করোনায় কেউ মা’রা গেলে তারা কাফন দাফন ও জানাযা পড়াবেন, সেই লক্ষ্যে উলামা পরিষদ নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- উলামায়ে পরিষদ নেতা ইসমাঈল হোসাইন সিরাজী, মুফতি হারুন অর রশিদ, মুফতি দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা মীর আহমাদুল্লাহ, হাফেজ মনোয়ার হোসেন, মাওলানা রহমত উল্লাহ বুখারী সহ অন্যান্যরা।
মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছিলেন, করোনায় কেউ মা’রা গেলে যদি কেউ তাদের কাফন দাফন করতে না চায় তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় গোসল, জানাযাসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করবো। যদি নারায়ণগঞ্জের কোথাও এরকম ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের জানালে আমরা কাফন দাফনের ব্যাবস্থা করবো।
তবে ঘোষণা দিলেও তাদের আর খোঁজ মিলছে না। সম্প্রতি জামতলায় এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গে মা’রা গেলে দাফনের জন্য অনেকবার মোবাইলে কল দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি এ আলেমদের। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর সেই দাফনের ব্যবস্থা করেন। সকল কাজ শেষ হবার পর বিকেলে মাওলানা ফেরদৌস সবাইকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন কী হয়েছে!
স্থানীয়দের মতে, শুধুমাত্র মিডিয়ায় শিরোনাম হতেই আলেম নামধারীরা দাফনের কথা নিয়ে চরমভাবে ভ’ন্ডামি করেছেন। এরা এতদিন বিভিন্ন রাজনীতি নিয়ে মাঠে কাজ করেছেন, এখন মৃ’ত্যু নিয়েও ভাঁ’ওতাবাজি করছেন। তাদের এমন কর্মকান্ডে চরমভাবে বি’ব্রত হয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। আর তাই কমিটি করার পরও প্রতিশ্রুতি না রাখার জন্য যেন মানুষের কাছে দ্রুত ক্ষমা চায় সেই প্রত্যাশাই করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জে করোনা উপসর্গ কিংবা এ রোগে কেউ আক্রা’ন্ত হয়ে মৃ’ত্যুবরণ করলে দাফনের ঘোষণা ছিল ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদেরও। সেই ঘোষণা মোতাবেক ইতিমধ্যে মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে অনেকেরই দাফন কাফন সম্পন্ন করেছেন তিনি।
গতকালের এমন একটি ঘটনায় জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকায় ৫ দিন ধরে করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ থাকায় পর আফতাব উদ্দিন (৭০) নামে এক ব্যক্তি মা’রা গেছেন। তার পরিবারের কাছ থেকে ফোন পেয়ে তাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) পক্ষ থেকে দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘরের ভেতরে একটি খাটে ডেডবডি পড়ে থাকলেও পরিবারের কেউ সেটা ধরেনি। পরে কাউন্সিলর লোকজন নিয়ে ডেডবডি নিয়ে মাসদাইরে কবরস্থানে দাফন করেন।
নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, পরিবারের দাবি করোনা ভাইরাসের সকল উপসর্গ নিয়ে গত ৫ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। পরে গতকাল দুপুরে তিনি মা’রা যান। এ সময় পরিবারের কেউ ভ’য়ে কাছে ঘেঁষেননি। আমাদেরকে অনুরোধ করলে আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় সকল নিয়ম মেনে মাসদাইরে সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করেছি।
খোরশেদ বলেন, কথা দিয়েছিলাম করোনা কেউ মা’রা গেলে আমরা দাফন করবো। রেগুলারই করছি। গতকাল বাদ ফজর ফোন পেয়ে স্বেচ্ছাসেবক আরিফুজ্জামান হীরা, হাফেজ আকরাম ও জুনায়েদকে নিয়ে মেয়র মহোদয় ও ফতুল্লা পুলিশের সহযোগিতায় কবর খনন, গোসল ও জানাজা শেষে দাফন করলাম।