বিশেষ প্রতিবেদন:
করোনা নিয়ে বাংলাদেশ আশা নিরাশার দোলাচালে দুলছে। একদিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, অন্যদিন পরিস্থিতি আবার আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। টানা ব্যর্থতা ও সীমাব’দ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো করোনা পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সবকিছু খুলে দেওয়ার দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশকে বরং আশাবাদী দেখাচ্ছে। গত পরশু যেখানে করোনায় ৪০ জন মা’রা যাওয়ার পর যে চোখ অবস্থায় ছিল, গতকাল কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়েছে। গতকাল ২২ জন মৃ’ত্যুবরণ করেছে, আক্রা’ন্তের হারও কমেছে। পরশু যেখানে ২১ শতাংশের ওপর ছিল, কাল তা ছিল ২০ শতাংশের কিছুটা বেশি। পরশুর চেয়ে গতকাল আক্রা’ন্তের সংখ্যাও কমেছিল। আর এসব নিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী হয়ে উঠতেই পারে। অনেকেই বলছেন, করোনা নিয়ে যে নে’তিবাচক শ’ঙ্কাগুলো তৈরি হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত সত্যি না-ও হতে পারে। বাংলাদেশে করোনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার যে প্রধান কারণগুলো এখন সামনে আসছে তা হলো-
১. লাফিয়ে বাড়ছে না মৃ’ত্যু
বাংলাদেশে করোনায় এখন পর্যন্ত ৬৭২ জন মা’রা গেছে। সর্বশেষ পরশু মা’রা যায় ৪০ জন, কাল ৩৭ জন। ইউরোপ বা আমেরিকায় যেমন হঠাৎ করে মৃ’ত্যুর হার লাফিয়ে বেড়েছিল, বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতিটা হয়নি এবং বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি হওয়ার আশ’ঙ্কা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেই মনে করছনে বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এভাবে মৃ’ত্যুহার থাকলে পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে এবং একটা পর্যায়ে আমরা করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বসবাসের অভ্যাস গড়ে তুলবো।
২. লাগামহীন হচ্ছেনা আক্রা’ন্ত
বাংলাদেশে আক্রা’ন্ত অনেক বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। কিন্তু যারা বলছেন যে মার্চে আক্রা’ন্ত কম ছিল, এপ্রিলে একটু বেড়েছে বা মে-তে আরো বেশি বেড়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, মার্চে পরীক্ষার হার ছিল খুবই কম, এপ্রিলে পরীক্ষার হার কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল এবং এখন দৈনিক ১০ হাজারের বেশি পরীক্ষা হচ্ছে এবং পরীক্ষার ফলে আক্রা’ন্তের হার যা বাড়ছে তা খুব একটা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করছে তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২১ শতাংশ আক্রা’ন্তের হার হলে তা বড় ধরণের ভ’য়ের কারণ নয়। এর ফলে বাংলাদেশে করোনার হার্ড ইম্যুউনিটির সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যাচ্ছে।
৩. মৃদু উপসর্গবাহী রোগীর সংখ্যা বেশি
বাংলাদেশে যারা করোনায় আক্রা’ন্ত তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গবাহী রোগীর সংখ্যা বেশি। সামান্য উপসর্গ নিয়ে তারা হয় বাড়িতেই থাকছেন বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলছেন। এর কারণে করোনায় আক্রা’ন্ত রোগীদের যে চাপ পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার উপরে তা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।
৪. মানুষ আগের চেয়ে সচেতন
গত ৩১ মে সবকিছু খুলে দেওয়ার পর মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়েছে। যা করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার আগে নিজের সুরক্ষা নিজে করার চেষ্টা করছে, এমনকি গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে। মানুষের মনে ভ’য় ঢুকে গেছে, তাই তারা বুঝতে পেরেছে, নিজের সুরক্ষা তাদের নিজেদেরই করতে হবে, যার কোনো বিকল্প নাই। এটাই করোনা মেকাবেলায় বড় আশাবাদ দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে।
৫. অর্থনীতিতে আশাবাদ
কর্মচাঞ্চল্য শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি যারা অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বে অর্থনৈতিক ল’ড়াইয়ে একটু ঝুঁ’কি নিয়ে হলেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেল। কারণ অর্থনীতি যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে জনস্বাস্থ্য মোকাবেলা করা কঠিন নয়, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কাজেই এখন অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার যে ঝুঁ’কিটি নিয়েছে, তার ফল বাংলাদেশ অচিরেই ভোগ করবে বলে আশাবাদী অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের।