বিশেষ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশ করোনা সং’ক্রমণের ৩ মাস শেষ হওয়ার পথে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান যে অনেকটা ভালো, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আগে যে অভিযোগগুলো ছিল, বাংলাদেশে পরীক্ষার হার কম, কম পরীক্ষা করা হচ্ছে, উপসর্গ নিয়ে মৃ’ত্যুগুলোকে গণনা করা হচ্ছেনা ইত্যাদি, সেই অভিযোগগুলো আমলে নিলেও দেখা যায় যে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় ভালো।
বিশেষ করে গত ৩১ মে থেকে বাংলাদেশ সবকিছু খুলে দেওয়ার পর ৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত করোনার পরিস্থিতি একটি সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষ করোনার সঙ্গে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ করোনার ভ’য় কাটিয়ে উঠছে যে সব কারণে, সেই কারণগুলো লক্ষ্য করা যাক-
১. আক্রা’ন্তের হার স্থিতিশীল
বাংলাদেশে গত ৩১ মে থেকে সবকিছু চালু করা হয়েছে এবং এরপর থেকে গত ৪ দিনে বাংলাদেশে করোনা সং’ক্রমণের হার দেখলে দেখা যাবে যে, প্রতিদিনই ২ হাজারের বেশি করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল। আজ ছিল ২ হাজার ৬৯৫ জন, গতকাল ছিল ২ হাজার ৯১১ জন, ১ জুন ছিল ২ হাজার ৩৮১ জুন এবং ৩১ মে ছিল ২ হাজার ৫৮৫ জন। অর্থাৎ হঠাৎ করে খুব বেশি করোনা আক্রা’ন্ত রোগীর শনাক্ত হয়নি- এটা বাংলাদেশের জন্য আশাজনক। দেখা গেছে, যেসব দেশে করোনার সং’ক্রমণ হয়েছে, সেখানে ৮০ তম দিন থেকে ১০০ তম দিন পর্যন্ত করোনা সং’ক্রমণের উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। এরপর আস্তে আস্তে করোনার সং’ক্রমণ কমে যায়। ইতালি, স্পেন বা যুক্তরাজ্যে একই ঘটনা ঘটেছে। তাই বাংলাদেশের হয়তো এই ধারাটি আরো ১০ থেকে ১২ দিন থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরপর আস্তে আস্তে বাংলাদেশে করোনার সং’ক্রমণ আপনা আপনিই কমতে শুরু করবে।
২. মৃ’ত্যুর হার কম
বাংলাদেশ সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ ছিল যে, বাংলাদেশে মৃ’ত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত কম। গত ২৬ এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশে কার্যত জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তখন গার্মেন্টসগুলো খুলে দেওয়া হয়, কিছু কিছু শিল্প-কারখানা, দোকানপাট খুলে দেওয়া হয় এবং মানুষও ঘর থেকে বের হতে শুরু করে। সেই বিবেচনায় ১ মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের মৃ’ত্যুর হার এখন পর্যন্ত তেমনভাবে বাড়েনি, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মৃ’ত্যুহার কম এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে মা’রা গেছে ৩৭ জন। ফলে করোনা যদি একটি স্বাভাবিক রোগ, জ্বর, ফ্লু’র মতো হয় তাহলে মানুষ এটাকে ভ’য় পাবে না এবং একারণে বাংলাদেশে করোনার ভ’য় কেটে যাচ্ছে।
৩. স্বাস্থ্যসম্মত জীবনে অভ্যস্ত
গত ৪ দিনে দেখা গেছে, যে গণপরিবহনে মানুষ গাদাগাদি করে উঠতো, সেখানে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে, ঢাকা শহরে মাস্ক ছাড়া মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, মানুষ নিজে থেকেই সচেতন হচ্ছে এবং করোনা সঙ্গে বসবাসের অভ্যস্ততা গত ৪ দিনে লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে মানুষ বুঝতে পারছে, করোনাকে নিয়েই বসবাস করতে হবে, নিজের সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং এজন্যে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, অফিস-আদালত করছে, জীবীকার সন্ধান করছে এর ফলে করোনারভীতি কেটে যাচ্ছে।
৪. বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে
এখন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় একাকার হয়ে গেছে। যার ফলে আগে যে আত’ঙ্ক ছিল, যে করোনা সং’ক্রমণ হলে ভ’য়াবহ পরিস্থিতি হবে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাবেনা- সেই পরিস্থিতি কেটে যাচ্ছে। এখন করোনার জন্য হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে এবং বেসরকারি হাসপাতাল উন্মুক্ত হওয়ার কারণে অপেক্ষাকৃত বিত্তবানরা বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছে এবং নিম্নবিত্তদের জন্য সরকারি হাসপাতালের ওপর থেকে চাপ কমছে।
৫. গরীব মানুষদের আক্রা’ন্তের হার কম
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা সং’ক্রমণে বিত্তবানদেরকেই বেশি আক্রা’ন্ত হতে দেখা যাচ্ছে। গরীব, নিম্নবিত্তদের আক্রা’ন্তের হার এখন পর্যন্ত কম। ফলে বাংলাদেশে করোনা সং’ক্রমণের যে ভ’য় কমে আসছে।
এই পরিস্থিতি যদি আরো ৭-৮ দিন থাকে তাহলে হয়তো বাংলাদেশ করোনার সঙ্গে বসবাসের একটি অভ্যস্ততা তৈরি করতে পারবে।
ছবি: শামীম হোসেন (নিজস্ব প্রতিবেদক)
169