সময় এখন ডেস্ক:
এখন থেকে পরিবহনে সব ধরনের চাঁদা আদায় বন্ধ। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহন খাতের ৩টি সংগঠন।
চাঁদা আদায় বন্ধে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সমিতি ও কমিটিগুলোতে চিঠি দিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের সব সড়ক, মহাসড়ক ও টার্মিনালে চাঁদা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। পরিবহন খাতের চাঁদা আদায় নিয়ে পুলিশ প্রধানের হুঁশিয়ারির পর মালিক ও শ্রমিক নেতারা এমন চিঠি দিলেন তাদের সংগঠনের বিভিন্ন শাখা এবং সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোকে।
পড়ুন: এই দুঃসময়ে ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের কল্যাণ তহবিলের টাকা কোথায়?
সম্প্রতি সময় এখন পোর্টালে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর চারদিকে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। চাঁদা আদায় বন্ধে এই প্রথম মালিক ও শ্রমিক নেতারা কোনো উদ্যোগ নিলেন।
এদিকে পরিবহন খাতে চাঁদা আদায় বন্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পরিবহন খাতের শীর্ষ ৩টি সংগঠন- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন পরিবহন খাতের চাঁদা আদায় বন্ধে একমত হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, কোথাও চাঁদা তোলা যাবে না। সারা দেশে সংগঠনের সব শাখায় এ নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা। কেউ কোথাও চাঁদা নিলে তাকে ধরিয়ে দিতে হবে।
এরই মধ্যে পুলিশের অ্যাকশন শুরু হয়েছে। পুলিশ আটকও করেছে। এ অভিযান চলছে। সম্প্রতি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পরিবহন মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে চাঁদা আদায় বন্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চাঁদা আদায় বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলো।
পরিবহন খাতের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি একেবারে ওপেন সিক্রেট। দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে শত শত কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো, যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন সড়ক পরিবহনে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। পরিবহন খাতে চাঁদা আদায়ের কারণে এ খাতে এখনো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে এসব নিয়ন্ত্রণ করে আসছে পরিবহন খাতের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলো। যাদের বিরু’দ্ধে অভিযোগের তীর, সেই সংগঠনগুলোর নেতারা এবারই প্রথম চাঁদা আদায়ের বিরু’দ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিলেন।
জানা গেছে, পরিবহন খাতের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলো যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন শাখাগুলোকে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনগুলো চাঁদা আদায়ের বিরু’দ্ধে আলাদা চিঠি ইস্যু করেছে। এসব চিঠিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, টার্মিনাল, সড়ক বা মহাসড়ক বা অন্য কোথাও গাড়ি থেকে কোনো ধরনের চাঁদা তোলা যাবে না।
সম্প্রতি মালিকদের যৌথ সিদ্ধান্তের পর সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বলেন, মালিকদের এমন যুগপৎ ঘোষণার পর টার্মিনাল ও সড়কে চলা পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ঢাকার ভিতরে হিউম্যান হলার, লেগুনা, সিএনজি থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়নি।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতিটি হিউম্যান হলার থেকে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়, যা এখনো বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া ঢাকায় ট্রান্স সিলভা, নূর-এ মক্কা, সালসাবিল, ভিআইপিসহ যেসব বাস চলে, এসব কোম্পানিভিত্তিক চাঁদা এখনো রয়েছে। এসব কোম্পানির নিজস্ব কোনো বাস নেই। গাড়ির মালিকরা টাকা দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে বাস দেন। আবার প্রতিদিন বাসের আয় থেকে কোম্পানিকে চাঁদা দিতে হয়।
কোম্পানিভিত্তিক বাসের চাঁদা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, কোম্পানিভিত্তিক বাস উঠিয়ে দিতে তারা প্রস্তাব করেছেন। এসব চাঁদা আর নেওয়া যাবে না। দেশের কোথাও কেউ পরিবহনে চাঁদা তুললে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি আমরা নিজেরাও খবর পেলে এখন পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছি।