সময় এখন ডেস্ক:
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর কমিশনিং করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর কমিশনিং অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, ‘সংগ্রাম’ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি যু’দ্ধ জাহাজ। এর কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, চীনে তৈরি বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১১ মিটার। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। শ’ত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘা’ত হানতে সক্ষম জাহাজটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যু’দ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত। জাহাজটিতে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য ডেক ল্যান্ডিংসহ অন্যান্য সুবিধাদি রয়েছে।
গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মোতায়েনযোগ্য এ জাহাজর মাধ্যমে বিশাল সমুদ্র এলাকায় অনু-প্রবেশ ঠেকানো, চোরা’চালান ও জলদ’স্যুতা রো’ধ, সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, সমুদ্র অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্লকসমূহের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার সশ’স্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে নৌবহরে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও যু’দ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত আধুনিক যু’দ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট। নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে যু’দ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হচ্ছে।
বানৌজা সংগ্রাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টাইপ ০৫৬ স্টেলথ ক্ষেপণা’স্ত্রবাহি কর্ভেট। জাহাজটি চীনের উচ্যাং শিপইয়ার্ডে তৈরি। জাহাজটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়া এই শ্রেণির ৩য় জাহাজ।
বানৌজা সংগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য:
নকশা
জাহাজটি দৈর্ঘ্যে ৯০ মিটার (৩০০ ফু) লম্বা এবং ওজন ১ হাজার ৩৩০ টন। জাহাজটিতে জার্মানির তৈরি ২টি এসইএমটি পিয়েলস্টিক ১২পিএ৬ ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে যার সাহায্যে এটি সর্ব্বোচ্চ ২৫ নট (৪৬ কি.মি/ঘ; ২৯ মা/ঘ) গতিবেগে চলতে সক্ষম। জাহাজটিতে সামনে ও পেছনে ২টি আলাদা পাওয়ার জেনারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যাতে একটি অ’কার্যকর হয়ে পড়লেও অন্যটির সাহায্যে জাহাজটি কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। চিরাচরিত গোলাকার সম্মুখভাগের পরিবর্তে জাহাজটিকে ভি-আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে যাতে উত্তাল সমূদ্রেও দ্রুতগতিতে চলতে পারে। কিন্তু জাহাজটিতে কোন সোনার সিস্টেম না থাকায় এর এন্টি-সাবমেরিন অপারেশন পরিচালনার শক্তি সীমিত। বানৌজা সংগ্রামে একটি হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং ডেক রয়েছে যেখানে একটি মধ্যম আকৃতির হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারে তবে এতে কোন হ্যাঙ্গার নেই।
ইলেক্ট্রনিক্স
জাহাজটি সমুদ্রপৃষ্ঠ ও আকাশে অনুসন্ধানের জন্য চীনের তৈরি এসআর২৪১০সি এস-ব্যান্ড ৩ডি এইএসএ রাডার ব্যাবহার করে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণ নিয়ন্ত্রণ এবং গোলাব’র্ষণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও এই রাডার ব্যাবহার করা যায়। এই রাডারটি ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা) দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে পারে এবং একসঙ্গে ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ করতে পারে।
অ’স্ত্রসজ্জা
জাহাজটিতে একটি এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মি.মি কামান রয়েছে যা জাহাজের সম্মুখভাগে বসানো হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা যে কোনো হুম’কি মোকাবেলা করার জন্য রয়েছে ৪টি সি-৮০২এ জাহাজবিধ্বং’সী ক্ষেপণা’স্ত্র। জাহাজটির নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে ২টি এইচ/পিজে-১৭ মডেলের ৩০ মি.মি দূর-নিয়ন্ত্রিত কামান। আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে ৮টি এফএল-৩০০০এন বিমান বিধ্বং’সী ক্ষেপণা.স্ত্র। জাহাজটিতে ২টি ৬-টিউব বিশিষ্ট টাইপ-৮৭ এন্টি-সাবমেরিন রকেট লঞ্চারও রয়েছে।