স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্ক:
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নেতৃত্ব দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদেরকে সরে যেতে হবে। এই নেতৃত্ব দিয়ে করোনা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ইনসাইডার-এর সঙ্গে করোনা মোকাবেলা নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় এই মন্তব্য করেন তিনি। বিএমএ-এর মহাসচিব বলেন, করোনা মোকাবেলা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গোটা জাতিকে বিভ্রা’ন্ত করেছে, সরকারকে বিব্র’ত করেছে এবং জনগণকে আত’ঙ্ক আর উৎ’কণ্ঠার মধ্যে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, উহানে যখন করোনা সং’ক্রমণ শুরু হলো তখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত ছিল। কিন্তু সেই প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। শুরুতেই আইইডিসিআর মাত্র ২ হাজার কিট নিয়ে বললো আমরা প্রস্তুত। মাত্র ২ হাজার কিট দিয়ে এরকম একটি মহামা’রি মোকাবেলা করার পরিকল্পনা করা নি’র্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং একক উদ্যোগের কারণেই সারাদেশে ৬১টি পিসিআর ল্যাব বসানো হয়েছে। অথচ এই কাজটি ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দেখবেন, সবকিছু করবেন- এটা কেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের দায়িত্ব পালনে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা যদি সেই সময়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো তাহলে এখন দেশে ১০০টি পিসিআর ল্যাব তৈরি করা যেত। দিনে অন্তত ৩০ হাজার পরীক্ষা করা যেত। কিন্তু এখনো মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সং’ক্রমণ সারাদশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক এই মেধাবী কর্মকর্তা মনে করেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ, তা আমরা জানি। করোনা ভাইরাসে মোট আক্রা’ন্তের ১৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে নিতে হয়। আর অন্তত ৫ শতাংশ রোগীদের জন্য আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। তাদের মধ্যে কো-মরবিডিটি থাকলে কিছু রোগীর ভেন্টিলেশন প্রয়োজন। তবে এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই সীমাহীন উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছিল, হয় তারা এই ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ছিল অথবা তারা অ’যোগ্য। এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা তাদের নেই।
তিনি বলেন, একটি মাত্র কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলার চেষ্টা করেছিল, যা ছিল অ’বাস্তব চিন্তা ভাবনা। আজকে যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে তা যদি শুরু থেকেই নেওয়া হতো তাহলে পরিস্থিতি এরকম হতো না। শুরু থেকেই এ নিয়ে প্রস্তুতির ব্যাপক ঘাট’তি ছিল।
ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, করোনায় এই পর্যন্ত ৪৫ জন্য চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন, সারাদেশে ১ হাজার ১০০ চিকিৎসক আক্রা’ন্ত হয়েছেন- যা শতকরা হিসেবে ৪ শতাংশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিএমএ মহাসচিব এর পেছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি শুরু থেকে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঠিকঠাক মতো পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক দিতো তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না।
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, মাস্ক কেলে’ঙ্কারি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী তাঁর অ’সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই খাতে যে সমস্ত দুর্নীতি হয়েছে তা ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হযনি। নিম্ন মানের মাস্ক এবং সুরক্ষা সামগ্রীর জন্যই চিকিৎসকরা বেশি আক্রা’ন্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে তাদের জন্য সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরী। যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেও ঘাট’তি দেখা দিয়েছে।
ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মনে করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট গাফিলতি, ব্যর্থতা এবং অ’যোগ্যতা রয়েছে। কাজেই দেশবাসীর মনে করে, সরকারকে বিব্র’তকর পরিস্থিতির মুখে ফেলা এই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবিলম্বে সরে যাওয়া উচিত।