বিশেষ প্রতিবেদন:
বেগম খালেদা জিয়ার ২৫ মাস জেলে থাকার সময় বিএনপির বিভিন্ন নেতারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন, সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাসহ নানারকম সুবিধা নিয়েছিলেন- এসমস্ত তথ্যের দালিলিক প্রমাণ বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছে গেছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দের কিছু ব্যক্তি যারা বিএনপিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই, তারা এই বিএনপি নেতাদের দ্বিচারিতার খোঁজখবর রাখতেন। এতদিন ধরে এসব খবর জোগাড় করে খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছে দিতে তারা সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যে তথ্য গিয়েছে তা আঁতকে ওঠার মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই দফা বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই চিকিৎসার খরচ সংক্রান্ত কাগজ বেগম খালেদা জিয়ার কাছে রয়েছে। এছাড়াও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা নিয়েছিলেন বলেও নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে।
বিএনপির আরেক নেতা এবং বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মোর্শেদ খানও সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েই তিনি এখন দল ছেড়ে লন্ডনে চলে গেছেন বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির আরেক নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে তার মামলাগুলো স্থ’গিত করেছেন। এজন্য তিনি বিএনপিতে নি’ষ্ক্রিয় এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোন আন্দোলন যেন না হয় সেজন্য চাপ দিয়েছিলেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময়েও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খন্দকার মোশাররফ হোসেন মিলে বিএনপির মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। এই বাণিজের একটি বড় অংশের টাকা লন্ডনে পাঠানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিএনপির আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খান সরকারের আর্থিক সহায়তা নিয়ে নিজের চিকিৎসা করেছেন এবং তিনিও ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময়ে মনোনয়ন বাণিজ্যে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির আরেক নেতা মির্জা আব্বাস সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে একদিকে যেমন দলকে নি’ষ্ক্রিয় রেখেছেন, অন্যদিকে তার বিরু’দ্ধে যত মামলা ছিল, সেই মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।
এছাড়াও আরো কয়েকজন নেতা রয়েছেন যারা সরকারের কাছ থেকে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন এবং দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকেও মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। এই সমস্ত আর্থিক লেনদেনের কোন হিসেব নেই বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার ২৫ মাস জেলে থাকার সময় বিএনপি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছিল লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে সরকারের সঙ্গে এই গোপন আঁতাতের ক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সহযোগিতা করেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. কামাল হোসেন- এমন নিশ্চিত তথ্য দিয়েছে বিএনপির কয়েকজন নেতা।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকা অবস্থায় ‘খালেদাপন্থী’ হিসেবে পরিচিত বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দকে কোণঠাসা অবস্থায় রাখা হয়েছিল এবং তাদের দলে কোন ভূমিকা ছিলোনা। তারা নীরবে দেখেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে উ’পেক্ষা করে কীভাবে তারা নির্বাচনমূখী হয়েছেন এবং নিজেরা বাঁচার জন্য কীভাবে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। অন্যদিকে নির্বাচনের সময়েও বিএনপির নেতৃবৃন্দ সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেননি। বরং শুরু থেকেই হেরে যাওয়ার জন্য নির্বাচন করেছেন। এ জন্যই বিএনপির এই পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করেন দলের অনেক নেতা।
প্রশ্ন হলো, বেগম খালেদা জিয়া এই তথ্য প্রমাণগুলো পেয়ে কী করবেন? তিনি কি এসবকিছু হজম করেই বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ববৃন্দদের দিয়ে দল চালাবেন নাকি দলে পরিবর্তন আনবেন? বেগম খালেদা জিয়ার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এখন তিনি রাজনীতি করার পরিস্থিতিতে নেই। তবে এই তথ্যগুলো তাকে হতা’শ এবং ব্যথিত করেছে। কিন্তু দলের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু তার হাতে নেই, তাই তিনি যে খুব বেশি কিছু একটা করতে পারবেন বলে মনে করেন না দলের অধিকাংশ নেতারাই।
বাংলাইনসাইডার