ফিচার ডেস্ক:
দ্বিতীয় বিশ্বযু’দ্ধ চলার সময় ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ারফোর্স এবং জার্মান বিমান বাহিনীর মধ্যে আকাশে যু’দ্ধ হয়েছিল। এই ‘ব্যাটেল অব ব্রিটেন’ শুরু হওয়ার ৮০ বছর পূর্তি হলো এই বছরের ১০ই জুলাই। ১৯৪০ সালের অক্টোবরে ওই যু’দ্ধে জয়ী হয়েছিল ব্রিটেন। হাম’লাকারী জার্মান ফাইটার জেটগুলোকে ডেকে পাঠাতে বাধ্য হয় হিটলার।
বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানায় এই যু’দ্ধে বিজয়ের জন্য ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী নির্ভর করেছিল অসাধারণ নকশার ফাইটার জেটগুলোর ওপরে। আর তার অন্যতম স্পিটফায়ার ফাইটার জেটের নকশায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল কিশোরী এক স্কুল ছাত্রী।
কে সেই কিশোরী?
হ্যাজেল হিল ছিল যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ১৩ বছরের এক বালিকা। তার পিতা, ফ্রেড হিল ১৯৩০ এর দশকে বিমান মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন। রাজকীয় বিমান বাহিনীর (আরএএফ) সব ধরনের কর্মকাণ্ড তদারকি করতো এই মন্ত্রণালয়। সেই সময় রাজকীয় বিমান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নানা ধরনের বিমান তৈরি করা হচ্ছিল, তার একটি ছিল ‘স্পিটফায়ার’ ফাইটার জেট।
আরএএফ যু’দ্ধবিমানের নকশায় যখন পিতাকে সাহায্য করেছিলেন হ্যাজেল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর প্রথমদিকের বিমানগুলো ততটা কার্যকর ছিল না। পরবর্তীতে সেই বিমানের উন্নত নতুন সংস্করণ তৈরি করা হয়।
সেসব সংস্কারের অন্যতম ছিল, বিমানে কতগুলো আগ্নেয়া’স্ত্র সংযুক্ত করা হবে। প্রথমে পরিকল্পনা করা হয়েছিল যে, ৪টি থাকবে। তবে হ্যাজেলের পিতা, ফ্রেড হিল ভাবলেন, সেখানে ৮টি সংযুক্ত করা উচিত। কিন্তু ঠিক কীভাবে বিমানে সেগুলো বিন্যাস করা হবে, অংকের সেই হিসাব তিনি করে উঠতে পারছিলেন না।
তখন তিনি বাড়িতে ফিরে গেলেন এবং তার কিশোরী মেয়ে হ্যাজেলকে ডেকে সমস্যাটির সমাধান করতে বললেন, যে মেয়ে অংকে তুখোড় ছিল। তখন অনেকে মনে করতেন, এই ফাইটার জেটগুলোয় ৮টি করে আগ্নেয়া’স্ত্র সংযুক্ত করা হলে বিমানের জন্য সেটা বেশি হয়ে যাবে এবং গো’লাসহ ওজনের কারণে বিমানগুলো উড়তে পারবে না। কিন্তু হিসাব কষে দেখা গেল, ব্রিটিশদের যু’দ্ধ জয়ের জন্য সেটা আসলে যথার্থ ছিল।
পিতা ফ্রেড হিলের সঙ্গে হ্যাজেল হিল বিমানের ওজন বেড়ে যাওয়ায় তাদের যে বিশেষ সক্ষমতার দরকার ছিল, সেটা তারা পেয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। হ্যাজেলের গাণিতিক হিসাব-নিকাশে তার পিতার সেই সমাধান ছাড়া যু’দ্ধের ফলাফল হয়তো ভিন্নরকম হতে পারতো।
হ্যাজেলের নাতনি ফেলিসিটি বেকার বলেছেন, তার দাদী গল্প করতেন যে তিনি বিমান নিয়ে কাজ করেছিলেন, কিন্তু শুধুমাত্র কিছুদিন আগে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার নাতনি হিসাবে আমি সবসময়েই গর্ব করে যাবো। আমার এখন আরও বেশি ভালো লাগছে যে, তার সেই অবদান ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীও স্বীকৃতি দিয়েছে।