সময় এখন ডেস্ক:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম ভোটযন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিতে দেশের ৮টি অঞ্চলে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেলা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ শনিবার খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা অঞ্চলে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য কমিশনাররা এসব স্থানে মেলা উদ্বোধন করবেন। অন্যদিকে, চলতি সংসদ অধিবেশনে আরপিও সংশোধন পাস না হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ডেমো ভোটগ্রহণ প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে মেলায়। তবে শুধু নির্দিষ্ট এলাকার ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। এই অঞ্চলগুলোতে মেলা শেষ হলে আগামী ১২ ও ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ইভিএম মেলা করবে ইসি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। আরপিও সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং সম্পন্ন হয়ে তা এখন মন্ত্রিপরিষদে আছে। এটি সংসদে পাস না হলে সংসদের অবর্তমানে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাস করা যেতে পারে। পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে এটা আইনে পরিণত হতে পারে। তবে যেহেতু সংসদ ২৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে, তাই এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে সবগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে না। কারণ বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আপত্তি রয়েছে এই যন্ত্রের প্রতি। তাছাড়া ইসির তেমন প্রস্তুতি ও জনবল নেই। আর নির্বাচন কমিশনও সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটারদের আস্থা বাড়ানোর পক্ষে।
নতুন ইভিএমের সুবিধাগুলো-
♠ ভোটগ্রহণের আগে মেশিন চালু হবে না: মেশিন চালু করার বিষয়টি পাসওয়ার্ডের ওপর নির্ভর করবে। এটি ভোটের আগে কারও জানার সুযোগ থাকবে না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে এটি চালু করার কোনও সুযোগ থাকবে না। এতে প্রচলিত কাগুজে ব্যালটের মতো ভোটের আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার সুযোগ থাকবে না।
♠ সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড: ইভিএম মেশিন চালু করার পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ভোট শুরুর আগে এসএমএস এর মাধ্যমে ওই পাসওয়ার্ড পৌঁছে যাবে। ফলে ওই অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে কেউ এটি চালু করতে পারবেন না। তবে, এক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তি কোনও দৈবদুর্বিপাকে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারলে দ্বিতীয় নির্ধারিত ব্যক্তির মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে।
♠ জাল ভোটের সুযোগ থাকবে না: ভোটের সময় ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। কোনও ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিললেই তার ভোটটি আনলক হবে এবং সেটি প্রদান করা যাবে। ফলে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এমনকি মেশিন ছিনতাই করে নিয়ে গেলেও ভোট দেওয়া যাবে না।
♠ ভোটার শনাক্তকরণ সহজ: কোনও ভোটার ভোট দিতে যাওয়ার পর তার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ছবিসহ বেশ কিছু তথ্য মেশিনের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। একইসঙ্গে মেশিনের সঙ্গে যুক্ত থাকা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় এই তথ্যগুলো দেখা যাবে। এতে পোলিং এজেন্টরা ভোটারকে সহজে চিহ্নিত করতে পারবেন।
♠ দুইভাবে ডাটা সংগ্রহ: ভোটাররা ভোট দেওয়ার পর তার তথ্য একইসঙ্গে মেশিনের অভ্যন্তরীণ ডাটা সেন্টারে সংরক্ষণ হবে। একইসঙ্গে মেশিনে যুক্ত এক্সটার্নাল চিপসেও তথ্য সংরক্ষণের সুবিধা থাকছে। এতে মেশিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই এক্সটার্নাল চিপসের তথ্য অন্য একটি মেশিনের মাধ্যমে রিড করা যাবে। আংশিক ভোট গ্রহণের পরও যদি মেশিনটি নষ্ট বা কোনও নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এক্ষেত্রে কেবল চিপসটি রক্ষা করা গেলেই তা অন্য মেশিনে যুক্ত করে ভোটগ্রহণ অব্যাহত রাখা যাবে।
♠ হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা শূন্য শতাংশ: সাধারণত কোনও ডিভাইস ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেটি হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কিন্তু ইভিএম মেশিনটি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না। এর পরিবর্তে ইসির নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা Nationwide Private Network (NPN) এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে বাইরের কারও পক্ষে এটি হ্যাক করার সুযোগ থাকবে না।
নতুন ইভিএমে ভোট শুরুর আগে-পরে শূন্য ভোটিং, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফল প্রিন্ট, ঘোষণা ও বিতরণ করার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে নতুন ইভিএমে। এগুলো হচ্ছে, পুরনো ইভিএমের ভোটার শনাক্তকরণ ইউনিট এবং ভোটিং ইউনিট দুটি একত্র করে একটি মেশিনে রূপান্তরিত করা; ব্যালট ইউনিট ক্যানসেল বোতামটি বাদ দেওয়া, ব্যালট ইউনিটের ভোট প্রদানের বোতামগুলো বড় আকারের ও ভিন্ন রঙের করা এবং বোতামের আকার একটু বড় করা; ভোটারের পছন্দের প্রতীকটি নিশ্চিতকরণে সতর্কতার সুযোগ, ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর ভোটারের জন্য ‘ধন্যবাদ’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরনো ইভিএমে ত্রুটি থাকায় ভোটগ্রহণে ৬ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। এগুলোর মধ্যে ভোটারের পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ পরীক্ষার ব্যবস্থা ও প্রদত্ত-গৃহীত ভোটের কাগুজে রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, কন্ট্রোল ইউনিটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভোটের ফল প্রকাশ না করতে পারা এবং মেশিনের ব্যাটারির চার্জ বেশিক্ষণ না থাকা।
নতুন ইভিএম সম্পর্কে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘পুরনো ইভিএম মেশিনে বেশ কিছু ত্রুটি পেয়ে আমরা উন্নত প্রযুক্তির এই ইভিএম সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। এই নতুন ইভিএম যেমনটি ইউজার ফ্রেন্ডলি তেমনি এটি হ্যাক করা বা জাল ভোট দেওয়ার কোনও সুযোগ থাকছে না।’