আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার করে দেশে ফেরার পথে পথে ঘাতকরা খুবই উল্লাসিত ছিল। এ সময় তারা ব্যাপক মদপানও করেছিল। ঘাতক দলটির প্রধানের গাড়ি চালকের বরাতে তুরস্কের দৈনিক দ্য হুররিয়াত ডেইলি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। ইতিমধ্যে খাশোগি হত্যায় ১৮ সন্দেহভাজনকে তুরস্কে প্রত্যার্পণের আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।
শুক্রবার তুরস্কের বেসরকারি টেলিভিশন এ হাবেরে দেয়া সাক্ষাতকারে ওই গাড়িচালক বলেন, ১৫ সদস্যের ওই সৌদি ঘাতক দলকে হোটেল থেকে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাকে ভাড়া করা হয়েছিল।
গত ২ অক্টোবর খাশোগি ইস্তানম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে নিখোঁজ হওয়ার পর সৌদি আরব প্রথমে তার ব্যাপারে কিছু জানা থাকার কথা অস্বীকার করেছিল। পরবর্তীতে তারা ওই কনস্যুলেটেই খাশোগি খুন হওয়ার কথা স্বীকার করে এবং ধ্বস্তাধ্বস্তিতে তিনি মারা যান বলে জানায়।
এই গাড়ি চালক বলেন, সেদিন দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ৯ জনের একটি দল অবতরণ করেন। তারা আমাদের ৩টি গাড়ি ভাড়া করেন। মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেবসহ ৩ ব্যক্তি আমার গাড়িতে ওঠেন। তারা চেয়েছিলেন, আমি তাদের হোটেলে উঠিয়ে দিয়ে পরদিন সকাল ৮টায় কনস্যুলেটে নিয়ে যাই।
১৬ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাশোগি হত্যার ঘটনায় তুর্কি কর্তৃপক্ষ ১৫ ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন। তারা সৌদি নিরাপত্তা, সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানা গেছে। তাদের নেতা মুতরেব সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বহুবার তুরস্ক সফর করেছেন।
২৩ অক্টোবরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুতরেব এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
তুর্কি গাড়ি চালক বলেন, সকালে তিনি ইস্তাম্বুল হোটেলে পৌঁছান এবং মুতরেবসহ সৌদি নাগরিকদের কনস্যুলেটে দিয়ে আসেন। তাদের গাড়ি সেখানে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেন। এই সৌদি স্কোয়াড কনস্যুলেটে ঢোকার ঘণ্টাখানেক পর ৩টি গাড়ি বেরিয়ে যায়। গাঢ় রঙের গ্লাসের একটি কালো ভ্যানকেও সেসময় বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।’
তুর্কি গাড়ি চালক বলেন, আমি দেখলাম, খাশোগির বাগদত্তা কনস্যুলেটের সামনে অপেক্ষা করছেন। তখন কনস্যুলেটে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেউ আসলে ভেতরে পরিদর্শন হচ্ছে বলে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে খাশোগিকে আর দেখা যায়নি। ২ ঘণ্টা পর সৌদি স্কোয়াড আমাকে তাদের হোটেলে যেতে বলে।
তিনি যখন হোটেলে চলে যান, তখন মুতরেব ছাড়া অন্য ৩ সৌদি তাদেরকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে একজন চালকের খোঁজ করে।
তুর্কি ওই চালক বলেন, তারা আমাকে এমন একটি জায়গার খোঁজ দিতে বলছিলো, যেখানে বসে খাওয়া যাবে। আমি তাদের একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যাই। তখন তারা খুবই উল্লসিত ছিল, গাড়ির ভেতর তারা অবিরত ধূমপান ও অবিরত মদ পান করে যাচ্ছিলো।