স্পোর্টস ডেস্ক:
অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল সবাই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো-কে ছাড়া এল ক্লাসিকো কতটা জমে তা দেখতে। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার মৌসুমের প্রথম ধ্রুপদী লড়াই ঠিকই হলো জমজমাট। তাতে একপেশে হার মানল মাদ্রিদ ক্লাব। লা লিগায় আগের ৩ ম্যাচে ন্যু ক্যাম্প থেকে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেও এবার উড়ে গেল তারা। লুইস সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে ৫-১ গোলে রিয়ালকে গুঁড়িয়ে দিলো বার্সেলোনা। এনিয়ে লিগে টানা তৃতীয় ম্যাচ হারল রিয়াল।
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসাতে অন্য ২টি গোল করেন ফিলিপ্পে কৌতিনিয়ো ও আর্তুরো ভিদাল। গোলের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল রিয়াল। ৮ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যান গ্যারেথ বেল। কাট ব্যাক করেন করিম বেনজেমার কাছে। কিন্তু ফরাসি ফরোয়ার্ডের হাফ ভলি গোলবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।
রিয়াল প্রথম সুযোগ তৈরি করলেও গোল উদযাপন করে সবার আগে বার্সেলোনা। ১১ মিনিটে ইভান রকিটিচের লম্বা ক্রস রিয়ালের খেলোয়াড়দের মাথার উপর দিয়ে মাঝমাঠে পাঠান। জোর্দি আলবা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আক্রমণে যান বাঁ প্রান্ত দিয়ে। সুযোগ বুঝে কাট ব্যাক করে বক্সের মাঝখানে বল পাঠান। ফিলিপ্পে কৌতিনিয়ো দুর্দান্ত শটে ফাঁকা জালে বল জড়ান।
বার্সার ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো ১৯ মিনিটে। রিয়ালকে ওইবার বাঁচান থিবো কর্তোয়া। বেলজিয়ান গোলরক্ষক দুর্দান্ত চেষ্টায় রুখে দেন আর্থারকে। তবে ৭ মিনিট পর কপাল দোষে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। ২৮ মিনিটে রাফায়েল ভারানের চ্যালেঞ্জে ডিবক্সের মধ্যে পড়ে যান লুইস সুয়ারেজ। বার্সার খেলোয়াড়রা পেনাল্টির জোরালো দাবি জানালেও রেফারি মিনিটখানেক খেলা চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির দ্বারস্থ হন হোসে মারিয়া সানচেস মার্তিনেস। ঘটনা বিশ্লেষণ করে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নেন এই রেফারি।
৩০ মিনিটে ১২ গজ দূর থেকে শট নেন সুয়ারেজ। তার শটের গতি বুঝে ঠিক দিকেই ডাইভ দিয়েছিলেন কর্তোয়া। কিন্তু উরুগুয়ান স্ট্রাইকারের নিচু শট লক্ষ্যভেদ করে দুরন্ত গতিতে। লিওনেল মেসির বদলে একাদশে ডাক পাওয়া রাফিনহার ৪৩ মিনিটের শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
প্রথমার্ধে দাপট দেখানো বার্সা বিরতির পর একটু সময়ের জন্য অচেনা হয়ে পড়ে। একের পর এক আক্রমণের শিকার হয় তারা। মুহূর্মুহু আক্রমণের পুরস্কার পায় রিয়াল ৫০ মিনিটে। ইস্কোর বিপজ্জনক নিচু ক্রস বার্সার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসে মার্সেলোর কাছে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে বেশি কষ্ট হয়নি ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের। একটি গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান মার্সেলো।
৫৪ মিনিটে বেলের শট ব্লক করেন জেরার্ড পিকে। পরের মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে হেড করেছিলেন সার্জিও রামোস। তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয় একটুর জন্য। ৫৬ মিনিটে নিজেদের বক্সে বলের দখল হারায় বার্সা। লুকা মদ্রিচের ডান পায়ের শট স্বাগতিক গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে বোকা বানালেও গোলপোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কিছুক্ষণ পর বার্সাকে হতাশ করে গোলপোস্ট। ৬০ মিনিটে সুয়ারেজের শট রিয়ালের পোস্টে আঘাত করে ফিরে যায়। রিয়াল সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে ৬৮ মিনিটে। ডানপ্রান্ত থেকে ভাসকেসের নিখুঁত ক্রস গোলপোস্টের ৬ গজ দূর থেকে হেড করলেও লক্ষ্য খুঁজে পাননি বেনজিমা।
রিয়ালের ফেরার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় ৭৫ মিনিটে আরও ১ গোল খেলে। বক্সের বাইরে থেকে সার্জি রবের্তোর ছোট ক্রসে জোরালো হেডে কর্তোয়াকে পরাস্ত করেন সুয়ারেজ।
আবারও দুজনের সমন্বিত চেষ্টায় বার্সা করে চতুর্থ গোল। ৮৩ মিনিটে রামোসের ভুলের সুযোগে রবের্তো পাস দেন সুয়ারেজকে। উরুগুয়ান স্ট্রাইকার ডানপ্রান্ত দিয়ে এগিয়ে কোর্তোয়ার উপর দিয়ে বল তুলে মারেন, তাতে সহজেই জালে জড়ায় বল। আর হ্যাটট্রিকের উল্লাসে মাতেন সুয়ারেজ।
বদলি নামার তৃতীয় মিনিটে ক্লাসিকোয় নিজের প্রথম গোল করেন আর্তুরো ভিদাল। ৮৪ মিনিটে আর্থারের বদলি হয়ে মাঠে নামেন চিলির তারকা। আর ৮৭ মিনিটে উসমান দেম্বেলের ক্রস থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ভিদাল।
১০ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের (১৯) কাছ থেকে শীর্ষস্থান কেড়ে নিল বার্সেলোনা। আর ৫ ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা না পাওয়া রিয়াল ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে।