সাভার সংবাদদাতা:
সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গণবি) কর্তৃপক্ষ সমাজের অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রবিবার (১১ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তৃতীয় লিঙ্গের ২ নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন সুমনা ও আঁখি। এরা দুজনেই সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার হিজড়া দলের সদস্য ছিলেন। এর আগে, ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো নূরমালা নীলা নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।
তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা যেন নিজেদের সমাজের বোঝা মনে না করেন, তারা যেন আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো নিজেদের সব কাজে নিয়োজিত করতে পারেন সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা চাই তারা স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষের মত এই সমাজে বসবাস করুক। তাই তাদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা করা সহ আমাদের এমন উদ্যোগ চালু থাকবে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা সাকিনা আক্তার বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদের সমাজে যেভাবে অবহেলিত ও অপমানিত হয়, তা সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। সমাজে আমরা শুধু তাদের তিরস্কারই করি, কিন্তু কখনো কোনো কাজের সুযোগ করে দিই না। তবে এটা সত্যি সুযোগ পেলে এরা আমাদের মতই কাজ করার যোগ্যতা রাখে।
প্রথম নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নূরমালা নীলা বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আমি সমাজের অন্যদের থেকে আলাদা, তখন থেকেই অবহেলা, তিরস্কার, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। তাই যখন আমাকে স্যাররা এখানে আসতে বলেছিলেন তখন আমি রাজি হইনি। ভেবেছি এমন একটি জনবহুল জায়গায় হয়ত আমাকে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে আমার ধারণা পাল্টাতে থাকে। আমিও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। তাই আমি আমার সঙ্গে অন্যদেরও এখানে আসার জন্য বলি। এখন আমি আর নিজেকে ছোট মনে করিনা বরং একজন মানুষ মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে দিন বদলের মাইলফলক হিসেবে দেখে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।