গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা:
গোপালগঞ্জ জেলা সদর এবং কাশিয়ানী উপজেলা নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া যাবে- এমন চিন্তা মাথায় আনেন না প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো। বরং সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত রক্ষা করাই তাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।
আসনটির সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি ১৯৯১ সাল থেকেই জাতীয় সংসদে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেলিম এমপি শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। এলাকায় নিয়মিত তার যাতায়াত, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে রয়েছে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। সাধারণ মানুষের বিপাদ আপদে পাশে দাঁড়ান সাধ্যমতো। এসব কারণে তার জনপ্রিয়তার কোন ঘাটতি নেই, দলের ভেতর প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই।
সেলিমের অবর্তমানে ছেলে শেখ ফজলে নাঈমও প্রতি মাসে দুই একবার গোপালগঞ্জ সফর করেন। যোগ দেন বিভিন্ন খেলাধুলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনিও সংগঠিত করছেন জনতাকে।
১৯৯১ সালে সেলিম যখন প্রথম নির্বাচন করেন, তখন তার প্রতীকে ৯৩ হাজার ১৫ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর পান ৯ হাজার ৬৬১ ভোট। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে সেলিম পান ১ লাখ ১৫ হাজার ৩২ ভোট, আর বিপরীতে শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর পান ৭ হাজার ৮২৫ ভোট। ২০০১ সালে সেলিমের ভোট বাড়ে আরও। পান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২১ ভোট। প্রার্থী পাল্টে শেখ সাইফুর রহমানকে দাঁড় করিয়ে বিএনপি পায় ৮ হাজার ১৬৪ ভোট। ২০১৪ সালে সেলিম পান ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯১ ভোট। আর বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মধ্যে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয় জাতীয় পার্টি। দলের প্রার্থী কাজী শাহীন পান ৪ হাজার ৮৪ ভোট।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা রনী হোসেন কালু বলেন, ‘গোপালগঞ্জের মাটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই ঘাঁটির সবাই নৌকার মাঝি। এখানে অন্য কোনো দলের হানা দেয়া বা ভাঙন ধরানোর কোন কারণ নেই। গোপালগঞ্জ-২ আসনে আমাদের জননেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাই নির্বাচন করে আসছেন। এবারও তিনি করবেন। আমরা ইতিমধ্যে তাঁর নির্বাচনী কাজ শুরু করেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা সবাই তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করব।’
গোপালগঞ্জ শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নিতীশ রায় বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ৩টি আসনেই আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। আগামী নির্বাচনেও তাই হবে।’
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাঈফ বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগকে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় না। যে দলের প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক না কেন। তারা তাদের জামানত হারান।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, ‘গোপালগঞ্জে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো মার্কা ভোটাররা খোঁজেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, ‘এই জেলায় হাত দেয়ার ক্ষমতা অন্য কোনো দল বা ব্যক্তির আছে বলে আমার মনে হয় না। সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে এবং থাকবে।’
ভোটের মাঠে শক্তিহীন থাকলেও বিএনপির আশা, এবার সম্মানজনক ভোট পাওয়া যাবে। জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, সাবেক সভাপতি এমপি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সিরাজুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন, মাঝে মধ্যে গোপালগঞ্জে আসেন। খোঁজ খবর নেন নেতাকর্মীদের। বলেন, ‘যদি সমতার ভিত্তিত্তে পরিচালিত হয় তাহলে বিএনপি গোপালগঞ্জ ২ আসনসহ ৩টি আসনেই একটা গ্রহণযোগ্য ভোট পাবে।’
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আলমগীর হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে প্রার্থী হিসেবে।
আওয়ামী লীগের শরিক জাসদের (ইনু) গোপালগঞ্জ জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মাসুদুর রহমান, সহীদুল হকের (আম্বিয়া) নামও শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জেলা জাসদের সভাপতি শেখ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ৩টি আসনেই আমরা প্রার্থী ঠিক করে রেখেছি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’