কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা:
কিশোরগঞ্জ জেলা সদর এবং হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসনের গত ৪ বারের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন না হলে তার মনোনয়ন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকত না। কিন্তু তিনি কবে দেশে ফিরবেন সেটি নিশ্চিত নয়। তবুও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার পক্ষে সংগ্রহ করা হয়েছে ফরম।
গত ৩ দিনে দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আশরাফসহ মনোনয়ন কেনা হয়েছে মোট ১১ জনের নামে। জমাও পড়েছে সব। এই ১১ জনের মধ্যে দুইজন আশরাফের আপন ভাই ও একজন চাচাতো ভাই। বাকিদের প্রায় সবাই এলাকায় ব্যাপক পরিচিত এবং প্রভাবশালীও বটে।
আশরাফের যে দুই ভাই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তারা হলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম এবং সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। তাদের মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন শাফায়েত। আর মঞ্জুরুল লন্ডনপ্রবাসী।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আশরাফও লন্ডনে পাড়ি জমান। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি দেশে ফিরে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। আগের নির্বাচনে আসনটি বিএনপি জিতলেও আশরাফ আসার পর তার জনপ্রিয়তার কাছে ম্লান হয়ে পড়েন অন্যরা। এর পরের প্রতিটি নির্বাচনেই আশরাফ ব্যবধান আগের চেয়ে বাড়িয়েছেন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
আশরাফের চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটোও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির একজন পরিচালক। তিনি সরকারের চলতি মেয়াদে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েও হেরে যান।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য গঠিত অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় পৌর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শরিফ আহমেদ সাদীও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি এলাকায় সৎ এবং আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য।
সাদীর বাবা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি হলে উপ-নির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য হন। নির্বাচনে তিনি হারিয়ে দেন সৈয়দ নজরুলের ভাই সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলামকে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন গত কয়েক মাস ধরেই সদর আসনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন। যদিও তার বাড়ি মিঠামইন উপজেলায়। তার বড় ভাই রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য।
কৃষি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মশিউর রহমান হুমায়ুনও এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক পেতে আগ্রহী। যে দুটি উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত, তার মধ্যে হোসেনপুর থেকে আওয়ামী লীগের একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি।
চিকিৎসকদের মধ্যে আওয়ামী লীগপন্থী সংগঠন ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’, কিশোরগঞ্জ শাখার সভাপতি ডা. দীন মোহাম্মদও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ফরম জমা দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ এবার সংসদ সদস্য হতে চান। তিনিও ফরম তুলে জমা দিয়েছেন।
এর বাইরে বিন্নাটি ইউনিয়নে আরএফ আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গুলশান আরা বেগম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পাঠাগার সম্পাদক এমএ হান্নানও মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন। যদিও এলাকার রাজনীতিতে এই দুই জনের খুব একটা পরিচিতি নেই।