কূটনৈতিক ডেস্ক:
৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মার্কিন উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্টিফেন বিগান। গতকাল তিনি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। আর এসব বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন নীতি ও চিন্তা স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশে চীনের সক্রিয়তা ঠেকাতেই মার্কিন মন্ত্রীর এই সফর, এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন কূটনীতিক মহল।
তবে, একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল আগ্রহ বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে। বঙ্গোপসাগরে যেন কোনভাবেই চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই স্টিফেন বিগান ঢাকায় এসেছেন বলে জানা গেছে।
গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের অংশগ্রহণ এবং অবদান বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব মেগা প্রকল্পে চীন কোনো না কোনভাবে যুক্ত। এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে পরিকল্পনা করছে চীন। বঙ্গোপসাগরে যদি চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে এই অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে চীনের হাতে। এতে শুধু ভারত নয়, ক্ষ’তিগ্রস্থ হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও।
এক অর্থে, ভারতের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষ’তি হবে বেশী। মার্কিনীদের ‘বিশ্ব মোড়ল’ থাকাটাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। গত কিছুদিন ধরেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনের সামরিক আগ্রা’সন নিয়ে কথা বলছে। বিভিন্ন দেশে চীন অর্থনৈতিক সাহায্যের আড়ালে সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। যদি বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়, তাহলে এই অঞ্চলের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
এ কারনেই বাংলাদেশের সাথে এমন একটি কৌশলগত অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়, যেখানে চীনের প্রভাব সংকুচিত হয়। এই লক্ষ্যেই বিগান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন।
একাধিক সূত্র বলছে, বিগানের এই সফর বাংলাদেশ নিয়ে পরিবর্তিত মার্কিন নীতিরই প্রকাশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের ওপর নির্ভর থেকে ভরসা পাচ্ছে না। বাংলাদেশ-ভারত অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক থাকার পরও বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতও কৌশলগত কারণে, বাংলাদেশের সঙ্গে ‘একক সম্পর্কনীতি’ নিয়ে এগুচ্ছে। এর ফলে এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
কূটনীতিক মহল মনে করছেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন-চীন-ভারতের ত্রিমুখী আগ্রহ বাংলাদেশের কুটনৈতিক সাফল্যেরই চিহ্ন। সকলের সাথে বন্ধুত্ব। কারো সাথে শ’ত্রুতা নয়- এই নীতির সফল প্রয়োগ ঘটাতে পেরেছে বাংলাদেশ। আর সে জন্যই বাংলাদেশ ভারত এবং চীনের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক রাখতে পারছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও বাংলাদেশ দূরে ঠেলে দিতে চায় না। অনেকেই মনে করেন, ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির একটি অনন্য উদাহরণ বাংলাদেশ।