সময় এখন ডেস্ক:
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত একটি ছাত্র আন্দোলন- কোটা সংস্কার আন্দোলন। শিবিরের নেতা কর্মীদের নেতৃত্বে আন্দোলনটির মাধ্যমে সরকার পতনে উস্কানি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা সুবিধা বাতিল কর সরকার। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮’ ঘোষণা করেছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।’
আজ সোমবার ৩ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনের সামনে ৪৫ দফা দাবি সম্বলিত ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা-২০১৮’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময় কোটা সংস্কারের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সকাল ১১টায় মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের বলেন, এখানে পরীক্ষার কাজ আছে। আজ এখানে কোন প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে না। পরে আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা হলটি আজ বুকিং দেইনি, আপনাদের কাজ থাকলে কেন আমাদের বুকিং দিয়েছেন? তবুও কর্তৃপক্ষের অনড় অবস্থানে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা তালাবদ্ধ মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনের সামনেই তাদের ইশতেহারটি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা এই ইশতেহার বিশ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্টারসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের কাছে গিয়ে দিয়ে আসেন।
ইশতেহারটি আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় এবং বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে দেওয়ার জন্যে কোটা সংস্কারের দুটি প্রতিনিধি দল ঢাবি থেকে সেখানে গিয়েছে। গণফোরামকেও ইশতেহারটি দেওয়া হবে বলে জানান নেতারা।
‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা ২০১৮’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, মোহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান, তুহিন ফারাবী, আমিন মোল্লা, আরিফ চৌধুরী শুভ, নাজমুল হাসান সোহাগ, লুৎফুননাহার লুনা, জসিম প্রমুখ।
‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর আয়োজকরা জানান, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, শোষণ-বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের দাবির আলোকে সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যেই আমাদের এই ইশতেহার আমরা ঘোষণা করছি। আশা করি একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার এটি গুরুত্বের সাথে আমলে নিবে। ইশতেহারে থাকা উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো:
১। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার আনতে হবে
২। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে। সকলের জন্য অভিন্ন বিয়সসীমা করতে হবে
৩। চাকরিরর আবেদনের ফি সম্পূর্ণ ফ্রি করতে হবে।
৪। শিক্ষায় জিডিপির ৫ ভাগ বা জাতীয় বার্ষিক বাজেটের ২০ ভাগ বরাদ্দ দিতে হিবে
৫। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে
৬। প্রশ্ন ফাঁস বিরোধী সেল গঠন করতে হবে
৭। বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করতে হবে
৮। প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে
৯। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ১০ ভাগ গবেষণায় দিতে হবে। যার ৬ ভাগ শিক্ষকদের জন্য এবং ৪ ভাগ হবে ছাত্রদের জন্য
১০। শিক্ষক নিয়োগে ৮০ ভাগ নম্বর লিখিত পরীক্ষায় এবং ২০ ভাগ নম্বর মৌখিক পরীক্ষায় রাখতে হবে।
এছাড়াও বিসিএস পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে তা ৫০ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
তারা আরো বলেন, নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফল প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিন ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা এই ছাত্র সংগঠনটি বর্তমানে নানান সামাজিক উন্নয়ন ও ছাত্র অধিকার নিয়ে কাজ করেছে।