সময় এখন ডেস্ক:
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর (১৫) আত্মহত্যার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে এনেছি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আদালত বিষয়টিকে হৃদয়বিদারক ঘটনা বলে আবেদন আকারে বুধবার রিট করতে বলেছেন। রিটে বিষয়টি তদন্ত করার আবেদন জানানো হবে।’
উল্লেখ্য, রোববার (২ ডিসেম্বর) পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়েন অরিত্রী অধিকারী নামে ভিকারুননিসার ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। ওই ঘটনার পর অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে অপমান করেছিলেন অধ্যক্ষ। সেই কষ্ট সইতে না পেরে সোমবার দুপুরে ঢাকার শান্তিনগরের বাসায় নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে।
আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত:
এই আত্মহত্যার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৩ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে এই কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, তদন্তে সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বজনদের অভিযোগ, স্কুলের শিক্ষকরা সবার সামনে অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারীকে অপমান করেন। বিষয়টি সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে অরিত্রি। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, বাবার অপমান নয়, বরং পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়ে জানাজানির লজ্জায় মেয়েটি এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে অরিত্রির বাবা সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী দিলীপ অধিকারী জানান, শান্তিনগরে ৭ তলা ভবনের ৭ম তলায় সপরিবারে থাকেন তারা। অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রবিবার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মোবাইলে নকল আছে- অভিযোগে স্কুলের শিক্ষকরা অভিভাবক ডেকে পাঠান। তাই গতকাল অরিত্রির সঙ্গে দিলীপ অধিকারী ও তার স্ত্রী স্কুলে যান। এ সময় তারা ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে মেয়ের ব্যাপারে ক্ষমা চান। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের অধ্যক্ষের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাদের প্রতি সদয় হননি।
এ সময় অরিত্রি প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে তিনি সবাইকে উচ্চস্বরে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন অরিত্রিকে টিসি দেওয়া হবে বলে জানান। এর পর অরিত্রি দ্রুত বাসায় চলে যায়। পেছন পেছন তার মা-বাবাও বাসায় গিয়ে দেখেন অরিত্রি নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেন তারা। সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন।
দিলীপ অধিকারী দাবি করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ের সামনেই আমাকে অনেক অপমান করেন। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরেই আত্মহত্যা করেছে অরিত্রি। তিনি দোষী শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস বলেন, অরিত্রি তার মোবাইল ফোনে বইয়ের বেশ কিছু পাতার ছবি তুলে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে। বিষয়টি নজরে আসে শাখাপ্রধানের। পরে শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে ডেকে এনে তাদের পুরো ঘটনা খুলে বলা হয়। এর পর অরিত্রিকে বহিষ্কারের বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। কাউকে কোনো অপমান করা হয়নি। তাই বাবাকে অপমানের জন্য নয়, নকলে ধরা পড়ে লজ্জায় অরিত্রি আত্মহত্যা করতে পারে।
পল্টন থানার এসআই আতাউর রহমান জানান, অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তবে তার মৃত্যুর পেছনে কারও প্ররোচনা ছিল কিনা তদন্তের পর তা জানা যাবে।
2