বিশেষ সংবাদদাতা:
তখন রাত প্রায় ১১টা। হাতের কাজ গুছিয়ে নিয়েছেন। তবে শেষবার চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইলে। ক্লান্ত প্রধানমন্ত্রী। বিশ্রামের জন্য গণভবনের দোতলায় চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় খবর পেলেন এক নেতা এসেছেন, দেখা করতে চান তাঁর সাথে। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কায় থাকা এক সংসদ সদস্য তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা পরিবার পরিজন নিয়ে গণভবনে হাজির!
অসীম ধৈর্য্য এবং প্রাণশক্তির অধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্লান্ত শরীরেও বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ না করে বসলেন তাদের সঙ্গে। সমস্যা জানতে চাইলেন। মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কিত এমপি এলাকায় তার কাজের ফিরিস্তি আর উন্নয়নের খবর দেন। জানান, এলাকার জনগণ এবং সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তার পক্ষে। কিন্তু এলাকায় মনোনয়ন পেয়েছেন দুজন। এমপিকে রাখা হয়েছে সেকেন্ড চয়েজ হিসেবে, এটাই তার আক্ষেপ। তিনি মনোনয়ন না পেলে কর্মী এবং জনগণ হতাশ হয়ে পড়বে, উন্নয়নও ব্যহত হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। এমন অনেক কথাই বলে যান সেই নেতা। যার সারমর্ম হলো, তার মনোনয়ন যেন নিশ্চিত করা হয় সেই আবেদন।
গভীর মনোযোগে প্রধানমন্ত্রী ওই এমপির কথা শোনেন। পরে বলেন, আপনাকে ৪ বার এমপি বানিয়েছে দল। একবার করা হয়েছে মন্ত্রী। আর কী চান? ৪ বার এমপি, ১ বার মন্ত্রী হওয়ার পরেও এলাকায় আপনার জনপ্রিয়তা কম। একাধিক জরিপে দেখা গেছে আপনার জনপ্রিয়তা কমছে। তবুও যদি আপনারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, তাহলে বলবো- আপনারা বেশি বুঝলে দল চালান, আমি সরে যাই। প্রধানমন্ত্রীর এমন ক্রোধ দেখে দ্রুত বিদায় নেন ওই এমপি।
আওয়ামী লীগে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। মনোনয়ন না পাওয়া শীর্ষ ৪ নেতাকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে বুঝিয়েছেন। কিন্তু এখনো অনেক আসনে কৌশলগত কারণেই একাধিক প্রার্থী দেওয়া আছে আওয়ামী লীগের। যেমন- মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের আসনে আরেকজন করে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। এর বাইরেও কিছু আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আছেন ২ জন। এদের কোনো একজন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন। অপরজনেরটি বাদ পড়বে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়েই এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তদবির আসছে দিনে-রাতে।
মনোনয়ন সংকটে থাকা অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা বলছেন কী কী কাজ তারা করেছেন। কিন্তু এই সংকটের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, দল তাদের জন্য কী করেছে। আর এমন প্রার্থীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া, এবার তারা দলের জন্য যেন নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে।