গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা:
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মস্থান কোটালিপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ায় প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে যে পরিমাণ ভোট পড়ে তা খুবই নগণ্য। বছর বছর এই সংখ্যাটা আরও কমছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সাল থেকে এই আসনে নির্বাচন করে আসছেন। প্রতিবারই যোজন যোজন ব্যবধানে বিজয়ী হন তিনি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনাকে লড়তে হবে স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন দলের ৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে। যদিও এই আসন থেকে এর আগে নির্বাচন করে প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪ প্রার্থী। এখানে শেখ হাসিনা ছাড়া আরও ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এদিকে হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়েছেন দাবি করে প্রচার চালানো হচ্ছিল। তবে সেসব যে নিছক গুজব তা ইতিমধ্যে জেনেছেন দেশবাসী।
গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ১৯৮৬ সালে এই আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচন করেন শেখ হাসিনা। তখন ৮০ হাজার ৬৪৬ ভোট পেয়ে জেতেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার বিপক্ষে লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী মাহমুদ হোসেনের পক্ষে ভোট পড়ে ২৪ হাজার ৩৫৫ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সরাফত হোসেন চৌধুরী পান ১ হাজার ৯৪০ ভোট। তখন ভোট পড়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৮৬১ ভোট। তখন প্রদত্ত ভোটের ৭৪.৭৬ শতাংশ পড়ে নৌকায়। সেবার গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকেও জেতেন শেখ হাসিনা। ওই আসনে তিনি পান ৮৬ হাজার ৩০১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মোহাব্বতজান চৌধুরী পান ৬৬ হাজার ৮৮৫ ভোট। হিন্দু ঐক্যফ্রন্টের ভবেন্দ্রনাথ দাস পান ৩৬২ ভোট। মোট ভোট পড়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৯ ভোট। অর্থাৎ প্রদত্ত ভোটের ৫৬.১৭ শতাংশ পড়ে নৌকায়।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন বিএনপির অপর প্রার্থী এস এম জিলানী ও জাতীয় পার্টির এ জেড অপু শেখ।
বৈধ প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বিএনপির এস এম আফজাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মারুফ শেখ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হক ও মো. উজীর ফকির।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম বদরুল আলম বদর বলেন, ‘গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচিত’ -এটি মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট খবর। এখানে এখনও ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন। এই প্রচার কারা, কোন উদ্দেশ্যে চালাচ্ছে জানি না?
প্রসঙ্গত, এর আগে দশম জাতীয় নির্বাচনে ওই আসনে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির এ জেড অপু শেখ। সেই নির্বাচনে ২ লাখ ১১ হাজার ৯৫১ ভোটের মধ্যে অপু শেখ পেয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩০ ভোট। তার আগে নবম জাতীয় নির্বাচনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮৫ ভোটের মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে এসএম জিলানী পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৫১ ভোট। আর শেখ হাসিনা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৮ ভোট।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিনই বঙ্গবন্ধুর নৌকা নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করবেন এটা আমাদের ও ভোটারদের প্রাণের দাবি। আমরা তৃণমূল থেকে নেত্রীকেই মনোনয়ন করে রেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর এই আসনে অন্য কোনো দলের প্রার্থী যদি নির্বাচন করে, তাহলে তারা জামানত হারাবে। অতীতে এমন হয়েছে। ভবিষ্যতেও এমনই হবে।’
গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু বলেন, ‘নেত্রীর বাইরে এই অঞ্চলের মানুষ ভুল করেও চিন্তা করে না। তিনি ছাড়া আমাদের অন্য কোনো প্রার্থী নেই বা সম্ভাবনাও নেই। বঙ্গবন্ধু যেমন এ এলাকার মানুষকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন, তেমনি তিনিও (শেখ হাসিনা) আমাদের ভালোবাসেন, স্নেহ করেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, ‘এই আসনের মানুষের ভালোবাসায় তিনি তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী। আগামীতেও এই আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
1