বরিশালের কুখ্যাত মাদকসম্রাজ্ঞী ‘বাবা-সুন্দরী’ নীলা আটক

0

বরিশাল সংবাদদাতা:

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার মাদকের আসর থেকে ‘বাবা-সুন্দরী’ খ্যাত নীলাকে (২৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আগৈলঝড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন জানান, এত বড় মাদকের সিন্ডিকেটের কথা তিনিও জানতেন না। অভিযানে নীলাকে গ্রেফতারের পর অনেক ঘটনাই সামনে আসছে। সকল বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এভাবে আরও কয়েকটি আস্তানার কথা জানা গেছে। সহসাই সেখানেও অভিযান পরিচালনার কথা জানান তিনি।

বাড়ির মালিক মিথুন মেম্বার জানান, গ্রেফতারকৃত নীলা তাদের গ্রামের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বাসা ভাড়া দেয়ার পরে সে জানতে পারে যে, নীলা খারাপ কাজের সাথে জড়িত। তাই তাকে বাসা ভাড়া অন্যত্র চলে যাবার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ১ ডিসেম্বর তার অন্য বাসায় যাবার কথা থাকলেও ৩০ তারিখ রাতে সে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।

জানা গেছে, স্কুল জীবনে বখে যাওয়া বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে বখাটে হয়ে যায় নীলা। তার বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার হরিণাহাটি গ্রামে। নীলা ওই গ্রামের আব্দুল আজিজ শিকদারে মেয়ে। আব্দুল আজিজ সিকদার বাংলাদেশ বেতারে চাকুরি করতেন। বাবার চাকুরির সুবাদে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করা অবস্থায় মাদকাসক্ত হয়ে পরে নীলা। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নীলা মেঝ। নেশার জগতে পা দেওয়ার কারণে লেখা পড়া বেশি দূর না আগানোয় বিয়ে দেওয়া হয় নীলাকে।

কিন্তু বেশি দিন টেকেনি সেই বিয়ে। এভাবে একাধিক বিয়ের পর নীলা নিজের পছন্দে ঢাকার মিরপুরে ওসমানি গনি সাফিন নামে গ্রামীণ শক্তির এক ব্যাটারি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে। স্বামীর পূর্বের সংসার থাকায় স্বামীর বাড়িতে উঠতে পারেনি সে। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। তবে মাঝে মধ্যে নীলার কাছে আসত তার স্বামী ওসমান গনি। পূর্বের দাম্পত্য জীবনে নীলা একটি কন্যা সন্তানের মা হলেও ওই মেয়েটি মারা যায়। বর্তমানে নীলার ৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সাময়িক সুখের খোঁজে একাকী জীবনে নীলা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এভাবেই মাদকসেবী থেকে নীলা পা বাড়ায় মাদক ব্যবসায়। ক্রমে অঢেল টাকার মালিক হয়।

অত্যন্ত ধূর্ত নীলা নিজের যৌবন ও রূপ লাবণ্যকে কাজে লাগিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিদেশ ফেরত উঠতি বয়সী তরুণদের। এভাবে কৌশলী নীলা সখ্যতা গড়ে তুলতে থাকে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। ধনাঢ্য বখে যাওয়া তরুণ মাদকসেবীদের টাকায় নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের সিন্ডিকেট। নিজের ভাড়া বাসায় দিন ও রাতে চলে মাদক সেবন, ব্যবসা। সাথে চলত রাত জেগে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মধুচক্র। নীলার মধুচক্রে হাজির হতো এলাকার প্রভাবশালী নামকরা ব্যক্তির সন্তানেরা।

স্থানীয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রভাবশালী লোকজনের ছেলেরা নিত্য সঙ্গী হয়ে পরে নীলার মধুচক্রে। প্রভাবশালীদের নেশাখোর ছেলেদের সাথে সখ্যতার কারণে আশপাশের কেউই নীলার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার সাহস পেত না। মাঝে মধ্যে নীলা ওই সকল বন্ধুদের সাথে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বেড়াতে যেত। এভাবে গৌরনদী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা অবস্থায় নীলার এসব কর্মকাণ্ড টের পেয়ে সেখানকার স্থানীয়রা তাকে ওই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করায়।

সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে নীলা আগৈলঝাড়া উপজেলা বাগধা ইউনিয়নের সদস্য মিথুন মেম্বারের ফুল্লশ্রী গ্রামের পাকা বাড়ি ভাড়া নেয়। মাদক আার টাকার পাহাড় গড়ে তোলার নেশায় এক পর্যায়ে মাদকসম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠে নীলা। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ছিঁচকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার মাধ্যমে তাদের ওই বাড়িতে নীলা গড়ে তোলে তার মাদকের আসরের মধুচক্র। সেখানে অবস্থান করা নীলার অতিথিরা ঘর থেকেও বের হত না। নীলার আশ্রয়ে ৪/৫ দিন থাকলেও ওই অতিথিদের খাবার সংগ্রহ করা হতো বাইরে থেকে। তবে নীলার মধুচক্রে বিপত্তি ঘটায় পুলিশ।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর রাতে ইয়াবাসহ নীলা ও তার অপর সঙ্গী ওই এলাকার কামাল পাইকের ছেলে রফিকুল ইসলাম পাইককে (১৯) গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় নীলার কাছ থেকে ১৫’শ পিস ও রফিকের কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আসর থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় বর্তমানে নীলা ও রফিকুল পাইক জেল হাজতে রয়েছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!