রাজবাড়ী সংবাদদাতা:
ঘটনাটি যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ৪ কিশোরীর বাড়ি ভিন্ন ৪টি জেলায়। নানা কারণে তারা পরিবার ছেড়েছিল। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ৪ জনকেই যৌনপল্লীতে বিক্রি করেছিল এক দালাল। এদের একজন আবার বাল্যবিবাহের শিকার। স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়ে আরেক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে। শেষমেশ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে আটকা পড়ে তারা।
তবে তাদের ভাগ্যপ্রসন্ন ছিল। জরুরি সাহায্যের নাম্বার ৯৯৯ তাদের দিয়েছে মুক্তি। জরুরি ফোন পেয়ে ওই ৪ কিশোরীকে অন্ধকার পল্লী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের আটকে রেখে যৌনবাণিজ্য করানোয় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২ নারী। গতকাল ভোরে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রুপার বাড়ি ফরিদপুর সদরের কানাইপুর রামখণ্ড গ্রামে। আর সুমি নামের অন্যজনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিটতলা গ্রামে।
উদ্ধার হওয়া এক কিশোরী জানায়, তার বাড়ি দিনাজপুর সদরের শেরপুর তেলিপাড়া গ্রামে। সে বাল্যবিবাহের শিকার। স্বামী ২য় বিয়ে করলে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যায়। গত কোরবানির ঈদের আগে কাজের সন্ধানে ট্রেনে এসে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আলাপ হয় শুভ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে।
শুভ বিউটি পার্লারের ব্যবসা আছে জানিয়ে তাকে ভালো বেতনের লোভ দেখিয়ে দৌলতদিয়ায় নিয়ে আসে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রুপা বাড়িওয়ালির কাছে বিক্রি করে দেয়। রুপা অপর বাড়িওয়ালি সুমির সহযোগিতায় হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে। ওই কিশোরীর সঙ্গে একই কায়দায় আটকে রাখা হয় আরও ৩ কিশোরীকে। তাদেরও বিভিন্ন স্থান থেকে বিউটি পার্লারে চাকরির লোভ দেখিয়ে দৌলতদিয়ায় এনেছিল শুভ।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এক খদ্দেরের মোবাইল থেকে কৌশলে ৯৯৯-এ ফোন করে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের আকুতি জানায় ওই কিশোরী। এরপর গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ শুক্রবার ভোরে তাদের উদ্ধার করে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী জানান, খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪ জন কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় ২ নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ৩ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে মানব পাচার আইনে।
শুভ নামের ওই ব্যক্তির ঠিকানা পাওয়া না গেলেও মোবাইল নম্বর জানা গেছে জানিয়ে তাকে অচিরেই গ্রেপ্তার হবে বলে জানান ওসি।