চট্টগ্রাম ব্যুরো:
তাবলিগ জামাত নিয়ে গণ্ডগোল ও টঙ্গী ইজতেমার মাঠে সাদপন্থীদের হামলার বিচারসহ করণীয় নির্ধারণে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় সারা দেশের প্রতিনিধিত্বশীল আলেমদের নিয়ে উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার হাটহাজারী মাদ্রাসার দারুল হাদিস মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মজলিসে আমেলা (নির্বাহী কমিটি), মজলিসে খাস, সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়ার শীর্ষ নেতারা, তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্যরা এবং সারা দেশের আলেম প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে নেতারা টঙ্গীতে হামলাকারীদের এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতারের দাবিসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানান বেফাকের সহসভাপতি ও ঢাকা আরজাবাদ মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
এসব সিদ্ধান্তগুলো হলো- ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফুল ইসলাম, নাসিম, আবদুল্লাহ সহযোগীসহ টঙ্গী হামলার ইন্ধনদাতাদের কাকরাইল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে, তাবলিগে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব গ্রহণ করা, মাওলানা সাদের বিভ্রান্তিসমূহ ও এ বিষয়ে একটি ফতোয়া তৈরি করে সারা দেশে প্রচার করতে হবে। এসব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬-১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা, এছাড়া তাবলিগের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৫-১৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা, তাতে দেশের শীর্ষ আলেম ও তাবলিগি মুরব্বিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং যথাসময়ে ইজতেমার করা, সরকারের সঙ্গে পরামর্শকৃত বিশ্ব ইজতেমার নির্ধারিত তারিখ ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ২০১৯ (প্রথম পর্ব) এবং ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি (দ্বিতীয় পর্ব) এখনই চূড়ান্ত করে ইজতেমার জন্য ময়দান তৈরি করার সুযোগ দিতে হবে।
বৈঠকে বলা হয়, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে পেশ করা দাবি পূরণ না হলে পরবর্তীতে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা মুহাম্মদ জোবাইর, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা শেখ আহমদ, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা মাহমুদুল আলম, মাওলানা আব্দুল বাছির, মাওলানা মুবারক উল্লাহ, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়জী, মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ফরিদী, মাওলানা উমর ফারুক, মুফতি জসিমুদ্দীন, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা জোবাইর আহমদ চৌধুরী ও মুফতি নুরুল আমিন প্রমুখ।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে সাদ সাহেব ও ওয়াসিফ অনুসারীরা যে অমানবিক ও নৃশংস হামলা করেছে তার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিজ্ঞমহল এটাকে একটি সুপরিকল্পিত হামলা বলে মনে করছেন। সেদিন সাদপন্থীরা যে বর্বরতা ও সহিংসতা দেখিয়েছে এটা তাবলিগের ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে লেখা থাকবে।
ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় ‘খবর আছে’ বলে বক্তারা হুঁশিয়ারী দেন।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমার মাঠে কাজ করা তাবলিগের সাথী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায় সাদপন্থীরা। এতে একজন নিহতসহ আহত হয় সহস্রাধিক। বহু সাথী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থী হাত-পা ভেঙে চিকিৎসাধীন আছেন।
3