সময় এখন ডেস্ক:
১৯৯০ এর দশকে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন গত শনিবার র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। লাগেজ ব্যবসা, স্বর্ণ চোরা কারবার, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি দখ’লের করে এখন তিনি ২ শতাধিক প্লট ও দেড় হাজার কোটি টাকার মালিক।
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫টি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋ’ণ নিয়েছে গোল্ডেন মনির।
যদিও গত অর্থ বছরে (২০১৯-২০) আয়কর রির্টানে তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়াও গত অর্থ বছরে গোল্ডেন মনিরের বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে গোল্ডেন মনির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন ক্ষমতাধর মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর তাদের ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলেন। জাল-জালয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২০২টি প্লট ও জমি দখ’ল করে নেয় গোল্ডেন মনির। এছাড়াও হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরেও বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচা’র করেছে গোল্ডেন মনির।
র্যারের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মনির হোসেন একদিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেননি। তিনি মূলত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, র্যাব শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করে। গোল্ডেন মনিরের বিরু’দ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র্যাবের কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত নয় বিধায় আমরা সরকারের ৪টি সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কী পরিমাণ অর্থ পাচা’র করেছেন বা কী পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুদককে অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁ’কি দিয়ে অ’বৈধ পথে কসমেটিক্স পণ্য ও চোরা কারবারের মাধ্যমে কী পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এনেছিলেন, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো।
এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যেকটি ৩ কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়া গোল্ডেন মনির জাল-জালিয়াতি করে ভূমি দখ’ল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।
উল্লেখ্য, শনিবার (২১ নভেম্বর) গোল্ডেন মনিরকে তার মেরুল বাড্ডার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পি’স্তল, কয়েক রাউন্ড গু’লি, ৬০০ ভরি স্বর্ণ (৮ কেজি), ১০টি দেশের মুদ্রা ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকাসহ আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনির দুবাইতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শনিবার গ্রেপ্তার এড়াতে পারলেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন। এদিন বেলা ১১টার দিকে আমিরাত এয়ারলাইনসের (EK-585) ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী পুরনো নথিপত্রে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। গোল্ডেন মনির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমান এবং তার বন্ধু মামুন ওরফে খাম্বা মামুনের সাথে মিলে চোরা কারবারের একটি চক্রের সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়াও বিএনপির দলীয় ফান্ডে তিনি প্রায়ই বড় অংকের অনুদান দেন।