সময় এখন ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবিকে মুর্খতা ও অজ্ঞতার অংশ বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে মৌ’লবাদিদের আ’স্ফালন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযু’দ্ধ প্রসঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি ও এই দাবি করা দলটির নেতৃবৃন্দের আচরণ চরম ঔ’দ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ। আওয়ামী লীগ সরকার ও মুক্তিযু’দ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণ এমন আচরণ সহ্য করবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জানান, শীঘ্রই আমরা এই ব্যাপারে সমুচিত জবাব দিবো। ইতিমধ্যে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দ’মন করা হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কোন মূর্তি নয়। এটাকে পূজা করা হবে না। বাংলাদেশ ও মুক্তিযু’দ্ধের ইতিহাস মানুষকে জানানোর জন্যই এই উদ্যোগ। এসব বন্ধের দাবি করছে তারা আদতে মূর্খতা ও অজ্ঞতার অংশ। তাছাড়া ধর্মের কোথাও ভাস্কর্যের বিরু’দ্ধে কথা নেই। বিশ্বের অনেক ইসলামিক দেশেই ভাস্কর্য আছে। এমনকি ইসলামিক দেশ হিসাবে পরিচিত পাকিস্থানেও জিন্নাহর ভাস্কর্য আছে। সেখানকার কোন রাজনৈতিক দল আজ পর্যন্ত এই ভাস্কর্যের বিরো’ধীতা করেনি।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার এবং আইএস সদস্যরা ইসলাম বিরো’ধী দাবি করে হাজার বছরের পুরাকীর্তি ও ভাস্কর্যকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি তথাকথিত ইসলামিক দলেরও দাবি তেমনই। এরা সংস্কৃতি বোঝে না, বোঝে না ইসলামও। কেবলমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ইসলামের নামে ভাস্কর্যের বিরো’ধীতা করছে।
হানিফ বলেন, খেলাফত মজলিশের এই দাবির পেছনে অন্য কোন ইস্যু আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা উচিত। দলটি ইসলামের নামে দেশে মুক্তিযু’দ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিপক্ষে ষড়’যন্ত্রে লিপ্ত কি না তা দেখতে হবে। একই সাথে তাদের এই দাবি সাম্প্রদা’য়িক সম্প্রীতি ন’ষ্টের কারণ হতে পারে। ধর্মান্ধ এই গোষ্ঠীদের অন্য কোন অ’সৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এর পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ষড়’যন্ত্র আছে। বাংলাদেশ ও মুক্তিযু’দ্ধের চেতনা ধ্বং’স করার জন্যই এই অপ’চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিত’র্ককে কোন রাজনৈতিক রূপ দেওয়া উচিত নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটিকে দেখতে হবে মুক্তিযু’দ্ধ, সংস্কৃতির আলোকে। বাংলাদেশের বহু স্থানে বঙ্গবন্ধুর এবং মুক্তিযু’দ্ধ সম্পর্কিত ভাস্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ। কারো বিরো’ধীতা ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আজীবন ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। যারাই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযু’দ্ধের বিরো’ধীতা করে, তাদের বাংলাদেশে থাকারই কোন অধিকার নেই।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরো’ধীতা আসছে মুক্তিযু’দ্ধের বিরো’ধীদের কাছ থেকে। যারা মুক্তিযু’দ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরো’ধীতা করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। মুক্তিযু’দ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতিই অংশ। এছাড়া হাজার বছর ধরেই ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতিতে বিদ্যমান। আজ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলছে তারাই দুদিন পর দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযু’দ্ধের সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার দাবি করবে।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতার মতে, বাংলাদেশ, মুক্তিযু’দ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইতিহাসে সমার্থক শব্দ। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি চিন্তা করা যায় না। তিনি জানান, সামনের বছরেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর সমাপ্তি ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করার দাবি আদতে বাংলাদেশ ও মুক্তিযু’দ্ধকেই অ’স্বীকার করা।
জনগণকে বিভ্রা’ন্ত করার চেষ্টা হলে সরকার কঠোর হস্তে দ’মন করবে জানিয়ে হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরো’ধীতা করার অর্থ বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে যে সমৃদ্ধিশালী দেশে হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করা। ধর্ম ব্যবসায়ী এসব দল জনগণকে ধর্মের নামে বিভ্রা’ন্ত করার চেষ্টা করছে। তারা যদি তাদের দাবি থেকে সরে না আসে, তবে বাংলাদেশের জনগণই তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেবে। বাংলাইনসাইডার।